সদস্য:MS Sakib/Sandbox

ৱিকিউৎসৰ পৰা


::::::::শ্রীশ্রীকৃষ্ণায় নমো নমঃ। 
পদ॥
নমো নারায়ণ নিরঞ্জন জগজীব।
পুরাণ পুরুষ হৃষীকেশ সদাশিব॥
দানব দলন দামোদর আদি দেব।
দণ্ডবতে পরি কেশবক করো সেব॥ ১
কৃষ্ণ পাদপদ্ম যুগ হৃদয়ত ধরি।
গুরুর চরণ মনে শিরোগত করি॥
মার্কণ্ডেয় পুরাণর কথাতে প্রধান।
পুয়ারে রচিবো হরিশ্চন্দ্র উপাখ্যান॥ ২
জয় জয় হরিশ্চন্দ্র নৃপতি তিলক।
রাজসূয় যজ্ঞ যজি ত্রিদশ দেবক॥
সশরীরে স্বর্গে গৈলা সমস্ত নগরে।
কৃষ্ণর চরণে পদ ভণিলা শঙ্করে॥ ৩
বিষ্ণু বৈষ্ণবর কথা দুয়ো সমতুল।
শ্রবণ কীর্তনে করে পাপর নির্ম্মূল॥
চণ্ডাল পর্য্যন্ত করে সবাকে পবিত্র।
জানি নিরন্তরে শুনা বৈষ্ণব চরিত্র॥ ৪
জৈমুনি বদতি শুনা ধর্ম্ম পক্ষি বর্গ।
কোন কর্ম্ম করি হরিশ্চন্দ্র গৈলা স্বর্গ॥
কি কারণে কদর্থিলা বিশ্বামিত্র ঋষি।
কহিয়োক কথা মোত পরম হরিষি॥ ৫
পক্ষিগণ বদতি শুনিয়ো ঋষিবর।
পৃথিবীতে সারোত্বর অযোধ্যা নগর॥
সংসারত যত গুণ গণ অলঙ্কৃত।
সর্ব্বক্ষণে যৈত জনার্দ্দন উপস্থিত॥ ৬
নির্ম্মিলা প্রবন্ধে বিধি পুরি বিতোপন।
স্বর্গতো অধিক সুখী যার প্রজাগণ॥
নিজ ধর্ম্মশালী শিষ্ট বৈষ্ণব সকলে।
ঘরে ঘরে প্রত্যকে অচলা লক্ষ্মী জলে॥ ৭
সেহি নগরত ভৈলা হরিশ্চন্দ্র রাজা।
পুত্রতো অধিক দশ গুণে পালে প্রজা॥
সন্ত মহন্তক ক্ষমাবন্ত সত্যবন্ত।
বিষ্ণুর ভকত মহাধর্ম্ম আচরন্ত॥ ৮
অস্ত্র শস্ত্র সমস্ত শাস্ত্রতে সুশিক্ষিত।
বুদ্ধি বৃহস্পতি সম প্রতাপে আদিত্য॥
কন্দর্প সদৃশ শোভে সুন্দর পরীর।
সর্ব্বগুণে গুণান্বীত সাগর গম্ভীর॥ ৯
নাহিকে লোকর শোক যাহার রাজ্যত।
নাহি মারি মরক দুর্ভিক্ষ দুঃখ যত॥
নাহিকে সচলে চোর ঘোর বিঘ্ন ভয়।
আকালত নাহি কারো মরণত ভয়॥ ১০
কর্ম্ম পথে থাপিলন্ত পৃথিবী মণ্ডল।
রায় বান্দী সম কিছু নাহি বলাবল॥
মহাসুখে প্রজা যেন বৈকুণ্ঠত বাসে।
স্বর্গ মর্ত্তে পাতাল ব্যাপিল যার যশে॥ ১১
পৃথিবীর রাজ্য গণে যাক বলে নাতে।
কর দিয়া রাজাগণে ভৃত্যবতে খাটে॥
জল সাগরক লাগি ভৈলা অধিকার।
সাতোদ্বীপা পৃথিবীর লবে কর ভার॥ ১২
হীরা মরকত মণি মাণিক অপার।
পর্ব্বত সমান দৌল বান্ধিলা ভাণ্ডার॥
সুবর্ণ রজত যত তাক কোনে লেখে।
যেহিভিতি চক্ষু চাবে রত্নময় দেখে॥ ১৩
লক্ষ কোটি শকটে শকতে ধন বহে।
ধনভরে তল যাই অযোধ্যা নসহে॥
জগতর লক্ষ্মী সবে ভৈল এক ঠাই।
শ্রীমন্ত হরিশ্চন্দ্র রাজা ইন্দ্র প্রায়॥ ১৪
এক চত্রে ভূঞ্জে অকণ্টকা বসুন্ধরি।
শৈব্যা নামে ভৈলা তান প্রিয়া পটেশ্বরী॥
স্ত্রীরত্ন মাজে লেখি গুণবতী সখী।
পত্নী পার্ব্বতী পতিব্রতা পূণ্যবতী॥ ১৫
পতি প্রাণ পতি জ্ঞান পতিকেসে ধ্যান।
পতি ব্যতিরেক স্বপ্ননতো নাহি আন॥
নৃপতির প্রাণতো অধিক আতি স্নেহ।
যেন গৌরী-শঙ্করে অভিন্ন ভৈল দেহ॥ ১৬
স্বর্গত ক্রীড়ন্তে যেন শচী পুরন্দর।
লক্ষ্মী সমন্নিতে যেন কেলি কেশবর॥
শৈব্যা ভার্য্যা সমে হরিশ্চন্দ্র মহারথ।
পুরিলন্ত নৃপতির সবে মনোরথ॥ ১৭
রোহিতাশ্ব নামে ভৈল তনয় রাজার।
যেন পূর্ণিমার চন্দ্র শিশু সুকুমার॥
সর্ব্ব সুলক্ষণ একো গুণে নাহী হীন।
নিরন্তর আছে নৃপতির যত চিন॥ ১৮
এহিমতে আনন্দে কতোদিন গৈল।
যজ্ঞ করিবাক নৃপতির মনভৈল॥
পূরোহিত বশিষ্ঠক অনাইলা মতাই।
বোলন্ত মিনতি করি হরিশ্চন্দ্র রাই॥ ১৯
তযু আশীর্ব্বাদ সুপ্রসাদে ভুঞ্জোরাজ।
ইন্দ্রতো অধিক দেখো আমার সমাজ॥
উপার্জ্জিত ধনরত্ন যিসে রক্ষা হুই।
করায়োক মোক মহা যজ্ঞ রাজসূয়ী॥ ২০
সুবর্ণ রজত রত্ন যত ধন ধান।
করিয়ো সাম্ফল ব্রাহ্মণক দিবো দান॥
তোমার প্রসাদে যজ্ঞ সিজোক সম্পতি।
ইটো সূর্য্য বংশর তুমিসে গুরু গতি॥ ২১
শুনি রঙ্গে ঋষিরাজে মাতিলন্ত পাছে।
যত লাগে সম্ভার গৃহতে সব আছে॥
ত্রৈলোক্যত কোন কর্ম্ম তোমার অসাধ্য।
সত্বরে অনায়ো বাচি রাজা এক লক্ষ॥ ২২
বশিষ্ঠে কহিলা যত যজ্ঞর বিধান।
হাঙ্কারে আনিলা রাজা লক্ষেক প্রমাণ॥
যেন যোগ্য আনি সমুচিতে কর দিল।
হরিশ্চন্দ্র মহারাজা যজ্ঞ আরম্ভিল॥ ২৩
সমস্ত সম্ভার মিলাইলন্ত মহারাজ।
অসংখ্যাত ঋষিগণ মিলাইলা সমাজ॥
বশিষ্ঠে মণ্ডল দিয়া আরম্ভিলা পূজা।
ভার্য্যায়ে সহিতে কুশহস্ত ভৈলা রাজা॥ ২৪
প্রথমে বোলন্ত পূজিয়োক গণপতি।
রাজায়ে বোলন্ত গুরু কমন যুগুতি॥
পরম পুরুষ হরি তাঙ্ক এঢ়ি আগে।
কিবা গুণে গণেশক পূজিবাক লাগে॥ ২৫
জগতর নাথ সংসারর আদি মূল।
বিষ্ণুক পূজিবো প্রথমতে দিয়া ফুল॥
বিষ্ণুত অর্পিবো যত পূজা যজ্ঞ দান।
বিষ্ণু ব্যতিরেক দেব নজানোহো আন॥ ২৬
হরি তুষ্ট ভৈল তুষ্টে হোবে চরাচর।
হেন বিষ্ণু এড়ি পূজিবোহো লম্বোদর॥
কাচক যতনে যেন পরিহরি হীরা।
শালগ্রাম মাটীতে নটিক দেয় পীরা॥ ২৭
বশিষ্ট বদতি শুনা নৃপতি প্রধান।
গণেশক কিসক করোহো এতমান॥
নৃপতি বোলন্ত গুরু নুবুলিবা মোক।
মাধবক আরাধিলে যেন লাগে হোক॥ ২৮
বিঘ্নর শঙ্কায়ে নুপুজিবো হৃষীকেশ।
ওকনিক ভয়ে কোনে মুণ্ডি আছে কেশ॥
বশিষ্ঠে লৈলন্ত আনো ঋষিত সম্মনি।
গণেশক এড়ি পূজিলন্ত লক্ষ্মীপতি॥ ২৯
অনেক নৈবেদ্য বলী বস্তু উপহারে।
মাধবক পূজিলন্ত বিবিধ প্রকারে॥
স্তুতি নতি ভকতি করিলা বহুভাবে।
যাবত শকতি পূজিলন্ত কৃষ্ণ পাবে॥ ৩০
অনেক আহুতি করি বহ্নি বিসর্জ্জিল।
প্রণতি পূর্ব্বকে আদিত্যক অর্ঘ্য দিল॥
বশিষ্ঠকো দিলা আনি দক্ষিণা অশেষ।
হয় হস্তী রথ দাস-দাসী গ্রাম্য দেশ॥ ৩১
অসংখ্যাত রথ রথি গাবে অলঙ্কার।
ভাণ্ডারে ভাণ্ডারে দিলা সুবর্ণ অপার॥
আনো ঋষিগণ যত আসন্ত সমাজে।
ভিন্নে ভিন্নে সবাকো অর্চ্চিলা মহারাজে॥ ৩২
পার্ব্বতীর পুত্র যত বিঘ্নির ঈশ্বর।
তাঁহান ক্রোধত কার্য্য হৈব অথান্তর॥
দিলা পুষ্প চন্দন বসন অলঙ্কার।
গাবে গাবে সুবর্ণর একোশত ভার॥ ৩৩
হরিশ্চন্দ্র নৃপতির রাজসূয় শুনি।
অযোধ্যাক আসি সবে ভরিলা ব্রাহ্মণী॥
অশেষ সেবকে দেই ভোজন সম্ভৃত।
দধি মধু মোদক ভুজন্ত পঞ্চামৃত॥ ৩৪
ঘৃত লাডু পরমান্ন ভুঞ্জি গণ্ডগোল।
ঘন ক্ষীর খান্তে যেন পেট ভৈল ধোল॥
তথাপি বোলন্ত মোক আরু কিছু লাগে।
উপছি পাত্রত থাকে তথাপিতো মাগে॥ ৩৫
কতো পঞ্চামৃত খুজিলন্ত খাইবো বুলি।
মুখত নযাই চাই থাকে হাত তুলি॥
বিধিক সুমরি কর্ম্ম করন্ত ব্রাহ্মণ।
এড়িয়ো নেরন্ত যেন কৃপণর ধন॥ ৩৬
খাহন্তে খাহন্তে কতো পাইলে গল মান।
বস্তু আনি চাতন্ত নেদন্ত সমিধান॥
থিয় দিয়া থাকৈ বান্তি আসিবাক ভরে।
যেন মঠ ধরি যোগীগণে ধ্যান করে। ৩৭
এহিমতে ভুজন্তে ব্রাহ্মণ লক্ষ কোটি।
মনত সন্তোষ পঞ্চামৃত নেই যুতি॥
অসংখ্যাত লোকে তাসম্বার ধরে আল।
স্বর্গতো লাগিল ব্রহ্মা ভোজন ঘঞ্চাল॥ ৩৮
নৃপতি বোলন্ত ঋষি মোর বোল করা।
সমস্ত ভণ্ডারে দিলো নিয়ামত পারা॥
শুনি দ্বিজগণে ভৈলা পরম সন্তোষ।
ভণ্ডার সোমায়া লগাইলন্ত লুরি লোস॥ ৩৯
একৈক ভণ্ডারে রত্ন লক্ষ কোটি মোণ।
আথে বেথে দম করি চপাবে ব্রহ্মাণ॥
ওপরত পরি তাক মোর মোর বুলি।
আপোন ইচ্ছায়ে ওপচান্ত ধরি জুলি॥ ৪০
বান্ধন্ত ভোকোন্দা কতো গুটি সুবর্ণর।
মুকুতা মাণিক মণি হীরা বাখরর॥
বোঝা লৈয়া তথাপি করন্ত হাঁই-ফুঁই।
তাকোনিবে নপারিয়া যান্ত কুজা হুই॥ ৪১
মুণ্ডফুটে বুলিয়া পেলান্ত কতো বোঝা।
নাকে খর উষাশ তানয় হুই কুজা॥
হা বিধি কিনো মোর দরিদ্রর চিন।
রাজসূয় যজ্ঞতল গৈল শুজা ঋণ॥ ৪২
রথত তুলিলা কতো আঙ্কোবালী ধরি।
গৃহত করন্ত বাজ কেঙ্কা জোঙ্কা করি॥
তুলি লৈবে নপারিয়া লৈযান্ত ঘসাই।
শরীরর বস্ত্র কাঢ়ি ডোলক লগাই॥ ৪৩
গোটে গোটে পেড়া কতো ধরন্ত সাবতি।
আনে ওচরক যান্তে লাগে হতা হতি॥
দেন্ত উকি পুত্র ভ্রাতৃ যার নামি কাঢ়ি।
আলগাই নেন্ত পাছে সাত পাঞ্চ বেঢ়ি॥ ৪৪
সুবর্ণর ঝারি খুরি আছে লক্ষ কোটি।
তাক দেখি কতো ব্রাহ্মণর আতি মুতি॥
জোট করি বান্ধে ওপরর বস্ত্র কাঢ়ি।
দুই হাতে লৈ যান্ত কান্ধত কতো আরি॥ ৪৫
তথাপি করন্ত যান্তে মনত বিকল।
মোর কি নভৈল হস্তী গোট মান বল॥
আজি লৈয়া গৈলো হন্তে ভণ্ডার উলাশী।
শতেক পুরুষ সুখে খাইলো হন্তে বসি॥ ৪৬
কতোদ্বিজগণে কঙ্কালত বস্ত্র কাছি।
রূপে ওপছায়া মাথে লৈয়া যান্ত পাছি॥
আন্দোল করিয়া চলি যান্ত বোঝা শিরে।
দলদোপ বসুমতি ব্রাহ্মণর ভীরে॥ ৪৭
জোটা জোটে আশেষ দ্বিজ নিরন্তর।
চিরঞ্জীব হৌক হরিশ্চন্দ্র নৃপবর॥
যাহার যজ্ঞক ত্রৈলোক্যতো নাহি সরি।
অদরিদ্র ভৈল দুঃখী ভিক্ষী দেশান্তরি॥ ৪৮
অন্যথানে কোনে এনে ব্রাহ্মণক দিব।
হরিশ্চন্দ্র সম দাতা নাহি নুপজিব॥
রাখিলা কিরিটি যাবে চন্দ্র দিবাকর।
এহি কথা মতে সবে চলি যান্ত ঘর॥ ৪৯
রাজার সহস্র কোটি ভণ্ডার অনেক।
ন পারিলা নিবে শত ভাগরো ভাগেক।
আনো যত প্রজা যজ্ঞশালে আছে আসি।
দিলা বস্ত্র অলঙ্কার বহু ধন রাশি॥ ৫০
রাজসূয় যজ্ঞে তুষ্ট ভৈলা চরাচর।
ত্রিদশে সহিত আসিলন্ত পুরন্দর॥
স্বর্গতো বসিয়া প্রসংশন্ত দেবগণ।
ধন্য ধন্য হরিশ্চন্দ্র সাম্ফল জীবন॥ ৫১
পাতালতো যশ বাখানন্ত দৈত্য নাগে।
কিনো মহা যজ্ঞ করিলন্ত মহা ভাগে॥
নভৈলন্ত নোপজিব চৈধ্য ভূবনত।
সাম্ফল জন্মিল রাজা মাতৃর গর্ভত॥ ৫২
পক্ষিগণ বদতি জৈমুনি শুনিয়োক।
যজ্ঞত নভৈল তুষ্ট নাহি হেন লোক॥
বিঘ্নির ঈশ্বর একে গণেশত বাজে।
পূজা নপাই গণপতি অধোমুখে লাজে॥ ৫৩
থাক থাক কৈক যাইবি রাজা অহঙ্কারী।
আর মান সাধো বুলি মোচরন্ত ডারি॥
মান্য খণ্ডি মোক তই নোপূজিলি আগে।
তার প্রতিফল দিবো নচারিবে লাগে। ৫৪
এহি গুণি গণেশর মনে সুখ নাই।
পাছে পাছে রাজার ফুরন্ত চিদ্র চাই॥
নৃপতিও আপোনার পুরি মনোরথ।
বিষ্ণুক চিন্তিয়া সুখে রহিলা রাজ্যত॥ ৫৫
শুনিয়োক সভাসদ যত নিরন্তর।
পরমার্থ কথা মার্কেণ্ডেয় পুরাণর॥
হরিশ্চন্দ্র রাজার চরিত্র অনুপাম।
পাপর নির্য্যাণ হোক বোলা রাম রাম॥ ৫৬
ছবি
ধর্ম্ম পক্ষিগণে বোলে         শুনিয়ো জৈমুনি ঋষি
যেন কথা ভৈলা তাত পাছে।
এহি মতে হরি        পৃথিবীমণ্ডলে ইন্দ্র
মহাকৃতকৃত্য হুয়া আছে॥
কৃষ্ণর প্রসাদে নৃপ        ভূঞ্জিলন্ত সাতোদ্বীপ
ধর্ম্ম দেহা চুইলে হরে পাপ।
হেন নাহি একো নরে        পাপত কুচ্ছা করে
সাক্ষাতে প্রজার মাব বাপ। ৫৭
লোকর একান্ত মতি         করন্ত ভকতি নতি
রাজরেসে চিন্তৈ হিতকার্য্য।
দেবতা মাগন্ত বর        হরিশ্চন্দ্র নরেশ্বর
যুগে যুগে করন্তোক রাজ॥
শৈব্যা পটেশ্বরী যার         স্ত্রীরত্ন মাজে সার
যেন লক্ষ্মী কৃষ্ণর ওচর।
গুণত যে হেন বিধি         যেহি বাঞ্চে সেহি সিদ্ধি
ভোগে যেন দুতি পুরন্দর॥ ৫৮
এহি মতে অযোধ্যাত         আছাযেবে নরনাথ
দিনেক মন্ত্রীক আদেশিলা।
মৃগ মারিবার কাজে         যাইবো বিজু বন মাজে
আনা সৈন্য নকরি গাফিলা॥
রাজার আদেশ পালি        উঠি মন্ত্রী গাব চালি
হাঙ্কারি আনিলা সামরাজ।
অনন্তরে নরেশ্বর         হস্তে ধরি ধনু শর
যাত্রা করি আসি ভৈলা রাজ॥ ৫৯
আরোহিলা দিব্য রথে        ধরিলা বনর পথ
অলক্ষ নৃপতি সেবা করে।
কতোহো চামরে ধুলি         কতো শ্বেত ছত্র তুলি
মাথার উপর করি ধরে॥
অসংখ্যাত সেনাগণে         অস্ত্র শস্ত্র তেতিক্ষণে
যোগান ধরিয়া আগে পাছে।
বাবে নানা বাদ্য ভাণ্ড         চতুর্দ্দোলে ছত্রদণ্ড
তুলি ধরি সৈন্যগণ কাছে॥ ৬০
অংসখ্য সহস্র রথ        চলি যাই রাজপথ
ধ্বজ দণ্ড গগণ বিয়াপি।
চতুরঙ্গ সেনা বলে        যুরি সবে জলে থলে
চলে এক যুপ করি ব্যাপী॥
লক্ষকোটি গজ বাজী        চলি যাই এক লাঞ্জি
গজ ঘণ্টা শবদ আম্ফাল।
চিহরে অসংখ্য ঘোরে        প্রচণ্ড প্রজার গিরে
ঘনে ঘনে যাই ভূমি চাল॥ ৬১
এহি মতে মহারাজ        চলি যান্ত বন মাজ
দেখিলন্ত বিমঙ্গল সেতু।
সর্প আহি বাজ ভৈলা        দক্ষিণে শৃগাল গৈলা
আগত পরিলে ধূমকেতু॥
ফন্দে বাম কর ঊরু        অনা বায়ু ভাগে তরু
পর্ব্বত শিখর পরে খসি।
সঘনে নির্ঘাত পরৈ        ঘনে ঘনে ভূমি লরৈ
এক আকাশত দুই শশী॥ ৬২
দেখি মন্দ অভিপ্রায়        মনত উৎসাহ নাই
তথাপি বিপাকে নেই টানি।
এহি মতে মহা ভাগ        অরণ্যক পাইলা লাগ
আদেশিলা মৃগ মারা হানি॥
শুনি সবে সেনাগণে        পশি সেহি ঘোর বনে
খেদি মারে হরিণা বরাহ।
কতো কতো জাল পাতি        শাল দাঙ দিয়া অতি
কতো করৈ অরণ্যক দাহ॥ ৬৩
নৃপতিয়ো রথ এড়ি        এক তেজি ঘোড়ে চড়ি
পশিলন্ত সেহি বন মাজ।
হাতে ধরি ধনুর্ব্বাণ        দেখিলন্ত বিদ্যমান
আগে উপসন্ন মৃগরাজ॥
দেখি রাজা সেহি চেগে        শরে বিন্ধিলন্ত বেগে
সিয়ো অন্তরিয়া মৃগবর।
জীব ভয়ে তেতিক্ষণে        বিজুলি চমকে যেন
বায়ু বেগে দিলেক লবর॥ ৬৪
রাজায়ো ঘোড়াত উঠি        পাছত দিলন্ত ছুটী
খেদি যাই হাতে পাই পাই।
যত রথ বাজী গজ        কেহো নপাইলেক লাগ
একেশ্বরে গৈলা মহারাই॥
হরিশ্চন্দ্র রাজ্যশ্বর        যান্ত যেবে বহুদূর
মনুষ্যর শুনিলা শবদ।
রিণি রিণি শুনি ধ্বনি        চাইলে রাজা মনে গুণি
স্ত্রীগণে করে আর্ত্তানাদ॥ ৬৫
কিবা মায়া রাক্ষসর        কিবা দৈত্য দানবর
কিবা একো দেবতার চলে।
যিহোক সিহোক ভাগে        তথাপি যাইবাক লাগে
কোনে করে স্ত্রীক দুর্ব্বল॥
সমস্ত পৃথিবী মোর        আত কোন খণ্ট চোর
যমত ঘেলাবে আসি গাব।
এহি বুলি মহারাই        মৃগ এড়ি যান্ত ধাই
যথাতে শুনন্ত আর্ত্তরাব॥ ৬৬
নমো নমো নারায়ণ        বিঘিনি খণ্ডন প্রভু
ভকত জনক করা দয়া।
হরি পদ প্রসাদত        সিদ্ধি হৌক অভিমত
নাশ যাউক সংসারর মায়া॥
কৃষ্ণর চরণ সেবি        রচিলন্ত পদ ছবি
কেশবর কিঙ্কর শঙ্করে।
শুনিয়োক নর লোক         কলিত সদ্গতি হোক
হরি হরি বোলে নিরন্তরে॥ ৬৭
পদ
পক্ষিগণ বদতি শুনিয়ো মহামুনি।
খেদি যান্ত রাজা যেবে আর্ত্তনাদ শুনি॥
সেহি বেলা মনে আলোচন্ত বিঘ্নিরাজ।
পাইলো সন্ধি আবে মোর সিদ্ধি ভৈল কাজ॥ ৬৮
তপে দীপ্তমান বিশ্বামিত্র মহা ঋষি।
মহাবিদ্যা সাধন্ত নির্জ্জন বনে বসি॥
ব্রহ্মারো অসাধ্য ইটো বিদ্যা মনে গমি।
ধরিলন্ত মহাব্রত ক্রোধক নিয়মি॥ ৬৯
সহিবে নপারি তার তেজক প্রভাব।
স্ত্রীরূপে বিদ্যাগণে করে আর্ত্তরাব॥
নজানিলে খেদি যান্ত নৃপতি অবোধ।
আর নিন্দা বাণী শুনি উঠি গৈলা ক্রোধ॥ ৭০
মোক অপমানে লগাই আছে দুরাচার।
এহি সময়তে আজি সাধো প্রতিকার॥
ঋষির হাতত কর রাজ্যর উচ্ছেদ।
তেবেসে খণ্ডিবে মোর হৃদয়ের খেদ॥ ৭১
এহিমতে গুণি পাছে দেবতা গণেশ।
নৃপতির শরীরত ভৈলন্ত প্রবেশ॥
রাজার উঠিলা আতি দশ গুণে কোপ।
রথত করন্তে যান্ত অনেক আতোপ॥ ৭২
মোহোর রাজ্যত কোনে চিন্তে অপকার।
কোন পাপীষ্ঠর আবে কট কটাই ঘার॥
দুহিবাক লাগি কোনে বাঘিনীক চান্দৈ।
মরিবার ঔষধী গলত তুলি বান্ধৈ॥ ৭৩
হেন মন্দ কর্ম্ম করে কোননো অধমে।
আমাক জোঙ্কাবৈ আসি মলচিল যমে॥
গড়ল কিসক ভুঞ্জে মরিবাক লাই।
আজি ঘোর শরে যমপুরে দিবো ঠাই॥ ৭৪
স্ত্রীক দুর্ব্বল করে কোননো নিস্খলে।
জলন্ত বহ্নিক বান্ধে বস্ত্রর অঞ্চলে॥
খানিতেক রহ আজি ছেদকরো শির।
মোর ঘোর শরে পীবে তপত রুধির॥ ৭৫
অনেক গর্জ্জন্তে যান্ত রাজা মহাবলী।
শুনি বিশ্বামিত্র আতি ক্রোধে গৈলা জ্বলি॥
এরিলন্ত যত মৌন ব্রতর বিধান।
চিদ্রপাই যত বিদ্যা ভৈল অন্তর্দ্ধান॥ ৭৬
পাছে বিশ্বামিত্রক দেখিলা নরনাথ।
দশন কামুরি ঋষি ঋঙ্কারন্ত মাথ॥
মহা ক্রোধে জ্বলে দেহা যেন অগ্নি পঞ্চ।
আরকত চক্ষুক ফুরান্ত যেন গুঞ্জ॥ ৭৭
শরীরর পরাগোটে বহি যাই ঘর্ম্ম।
চাহান নজাই যেন কালন্তক যম॥
থাক থাক বুলি দিলে আঙ্গুলি নিচান।
দেখি নৃপতির ভৈল অন্তরীক্ষ প্রাণ॥ ৭৮
আথে বেথে ঘোড়ার নামিল নরোত্তম।
ওষ্ঠ কণ্ঠ শুখাইল মুখত নাহি পম॥
অছারিয়া পেলাইল হাতর শর ধনু।
মহাভয়ে প্রবেশিল থির নুহি তনু॥ ৭৯
কাম্পে হাত পাব সবে শরীর তরাসে।
যেন অশ্বত্থর পত্র পছোবা বতাসে॥
দণ্ডবতে পড়ি রাজা করন্ত কাতর।
নজানিয়া তোমাকে বুলিলো অনুত্তর॥ ৮০
আর্ত্তনাদ শুনিলো স্ত্রীর বনত।
কোনোবা দুর্ব্বল করে মোহোর মনত॥
সিকারণে খেদি আইলো ধরি শর চাপ।
দিয়োক অভয় ক্ষমা করা ঋষি বাপ॥ ৮১
রাজা ভৈলে এহিসে আমার নিজ কাম।
শর ধনু ধরি ধর্ম্মে করিবো সংগ্রাম॥
দিবো মহা দান রক্ষা করিবো প্রজাক।
এহিসে কারণে শ্রেষ্ঠ সৃজিলা আমাক॥ ৮২
ঋষিয়ে বোলন্ত রাজা শুনিয়ো অবোধ।
কোনে এবে করিবে বনত আবে যুদ্ধ॥
কাহাক রাখিবে লাগে কাক দিবি দান।
জান যেবে অতি শীঘ্রে দেহ সমিধান॥ ৮৩
রাজা বোলে বুঢ়া ব্রাহ্মণক দিবো দান।
ভয়াতুর প্রাণীক করিবো পরিত্রাণ॥
শত্রু সমন্বিতে ন্যায় করিবো সংগ্রাম।
স্বরূপত কহিলো ক্রোধ করা উপশাম॥ ৮৪
হেন শুনি বিশ্বামিত্র দিলা সমিধান।
স্বরূপত যেবে ব্রাহ্মণক দেহ দান॥
মইতো ব্রাহ্মণ তেবে তোর চিনা জনা।
জান্তে মোক রাজসূইর দিয়োক দক্ষিণা॥ ৮৫
হেন শুনি নৃপতির নামি আইল ধাতু।
রঙ্গমনে বোলন্ত রক্ষার ভৈল হেতু॥
দানক মাগন্ত ঋষি আমাক নশাপি।
এরাইলো প্রমাদ উপজিলো পুনরপি॥ ৮৬
উলতিয়া স্বর্গ যেন পাইলা আনন্দত।
করযোড়ে বিনাবন্ত ঋষির আগত॥
তোমাক দিবাক পাইবো কত পুণ্যভাগে।
সত্বরে বুলিয়ো মোত কিবা দান লাগে॥ ৮৭
কিবা রত্ন রজতর অলক্ষ ভণ্ডার।
কিবা রাজদণ্ডপাত লক্ষ্মী অলঙ্কার॥
কিবা গজ বাজী আরু অযোধ্যা নগর।
কিবা লাগে দেও আপোনার কলেবর॥ ৮৮
আছে মহাশান্তি শৈব্যা প্রিয়া পটেশ্বরী।
রোহিতাস্য পুত্র মোর প্রাণ এড়ি সরি॥
যদি ঋষি খোজা মোত তাক দিবো দান।
নুহি তেবে বোলাদিবো আপোনার প্রাণ॥ ৮৯
পাইলা হেন জানি কিছু নাহি আত শঙ্কা।
বিস্তর বোলন্ত আরু কয়ো যত টঙ্কা॥
যেহি মন বাঞ্চা তাক খোজা বিশ্বামিত্র।
নিস্তে নিস্তে দিবো তাক নাহি কিছু চিত্র॥ ৯০
হেন শুনি রঙ্গ ভৈলা ঋষির মনত।
আউর কৈক যাস রাজা মোহোর হাতত॥
অনন্তরে নৃপতিক দিলা সমিধান।
যতেক যাচিলে তাক পাইলো হেন জান॥ ৯১
কিন্তু রাজসূয়র দক্ষিণা দিয়া আগে।
পাছে দান খোজি লৈবো মোক যিবা লাগে॥
প্রথমতে যজ্ঞর দক্ষিণা আছো খুজি।
যেন লাগে দিয়োক আপোন মন বুজি॥ ৯২
নৃপতি বোলন্ত দক্ষিণাক দিবো পাছে।
আগে দান লৈয়ো মনে যেন ইচ্ছা আছে॥
হেন শুনি ঋষিয়ে বোলন্ত ভাল ভাল।
যেবে দান দিবা মোক শুনা মহীপাল॥ ৯৩
সসাগরা পৃথিবীর যত অধিকার।
গজ বাজী প্রজা যত রত্নর ভণ্ডার॥
গ্রাম্য দেশ পর্ব্বত যতেক বন স্থলি।
সমস্তে দিয়োক মোক প্রতিজ্ঞা সাম্ফলি॥ ৯৪
বিস্তর বাক্যত রাজা নাহি মোর কাজ।
পুত্র ভার্য্যা সমন্বিতে তুমি মাত্র রাজ॥
নোখোজোহো পুণ্যক থাকোক তোর ভাগে।
আন যত সর্ব্বস্ব সকলে মোক লাগে॥ ৯৫
ধর্ম্ম পক্ষিগণে বোলে শুনিয়ো জৈমুনি।
করিলন্ত হাস্য হরিশ্চন্দ্র হেন শুনি॥
সার্থক আর্জ্জিলো রাজ্য ভার ধন ধান।
তুমি হেন ঋষিক স্বহস্তে দিবো দান॥ ৯৬
অসার সংসার জ্ঞানী লোকে হেন কহে।
যিবা দেই যিবা খাই সেইমাত্র রহে॥
অথির শরীর ক্ষণিকতে হোবে চন্ন।
ইসে সারোত্তর নিরন্তরে দান পুণ্য॥ ৯৭
কহি গৈল দিলিপ সাগর ভগীরথ।
কহি গৈলা বলী আদি পৃথু মহারথ॥
মই হেন নৃপতি কতেক ভৈল ঠাই।
অসার পৃথিবী কারো লগত নযাই॥ ৯৮
আপুনি করিবো আজি আক পরিত্যাগ।
মহাদান পুণ্য মৃত্যু ভৈলে দেই লাগ॥
এহি বুলি হাতে লৈয়া তিল কুশ জল।
দিলো ঋষি সসাগরা পৃথিবী মণ্ডল॥ ৯৯
একেবারে বোলা মোর যত অধিকার।
আজি ধরি ভৈল সবে সর্ব্বস্ব তোমার॥
হরিষ বদনে রাজা বুলি এহি বাণী।
ঋষির হাতত উৎসর্গিয়া দিলা পানী॥ ১০০
বিশ্বামিত্র বোলন্ত সমস্ত পাইলো দান।
পৃথিবী আমার ভৈল গোখোজ প্রমাণ॥
যেবে তই অকপটে দিলি মহারাই।
গুচি মোর রাজ্যর অন্যত্র লৈয়ো ঠাই॥ ১০১
তোক লাগে পাইলে মোক নমানিবে প্রজা।
কৈত শুনিয়াছ এক পাটে দুই রাজা॥
আপোনার পুত্র পত্নী লৈয়া মহারাজ।
কেবল শরীরে এতিক্ষণে হোবা বাজ॥ ১০২
নৃপতি বোলন্ত ঋষি যাউক নগর।
তুমি আজি ভৈলা অভিনব নরেশ্বর॥
শিরত ধরিবো আজি তোমার আদেশ।
পুত্র ভার্য্যা সহিতে ত্যজিবো আজি দেশ॥ ১০৩
এহি হৌক বুলি ঋষি চালিলন্ত গাব।
পাচত নৃপতি চলিযান্ত ভূমি পাব॥
গুছিল প্রতাপ রাজা শ্রীভৈল হীন।
বাঘর আগত যেন শঙ্কিত হরিণ॥ ১০৪
কতোক্ষণে আসি অরণ্যর ভৈলা বাজ।
নৃপতিক দেখি লাগ লৈলা সামরাজ॥
চতুর্ভিতি বেঢ়ি আসি ধরিলা যোগান।
সবাকো মাতিয়া রাজা দিলা সমিধান॥ ১০৫
আজি ধরি আমার নাহিকে অধিকার।
ত্যজিয়া ঋষিক দিলো যত রাজ্য ভার॥
ঋষিত করিয়ো সেবা মোত এড়ি আশ।
রাজ্যক চাড়িয়া আজি করিবো প্রবাস॥ ১০৬
কর্ম্ম যেন ভৈলা মোক নপারিবা গালি।
সর্ব্বক্ষণে থাকিবা ঋষির আজ্ঞা পালি॥
রোহিতাস্য পুত্র মই সৈব্যা পটেশ্বরী।
এহি তিনি জনে আজি ভৈলো দেশান্তরী॥ ১০৭
শুনিয়োক পুণ্য কথা যত সভাসদ।
একতিলে দেখা কেন ভৈল রাজপদ॥
পরম চঞ্চল ধন জন সবে জানি।
আর আশা এড়ি ডাকি বোলা রাম বাণী॥ ১০৮
দুলড়ী
এতেক বচন        শুনায়া সেনাক
নিশবদ ভৈল রাজা।
হেন অথন্তর        কথা শুনি সবে
তবধ ভৈলন্ত প্রজা॥
আকাশী চরগ        মাথাত পরিল
মুখর মাত হরিল।
মহা শোকশেল        হিয়াত পরিল
থিবয়ে যেন মরিল॥ ১০৯
হরি হরি বিধি        কিহত কি ভৈল
হাসিতে হরাইল রাজ।
নৃপতিক চাই        করৈ হাহাকার
কিনো নিদারুণ কাজ॥
অনেক পুরুষ        তোমার সেবক
তুমিসে আমার দেব।
কোন মতে আজি        তোমাক তেজিয়া
ঋষিত করিবো সেবা॥ ১১০
পুত্রতো অধিক        দশ গুণ করি
পালিলা তুমি আমাক।
একোকালে নতু        শুনো প্রাণ প্রভু
তোমার নিষ্ঠুর বাক॥
কি কারণে তুমি        কিবা মাব বাপ
হেন নতু জানৈ লোকে।
তুমি অবিহনে        কি করে জীবনে
কান্দৈ প্রজাসবে শোকে॥ ১১১
কৈরপরা আসি        পরিলেক ইটো
বিশ্বামিত্র ধূমকেতু।
ইহেন রাজ্যত        সুখতে বঞ্চিবে
নপাইলো ইহার হেতু॥
বনবাসী ঋষি        রাজ্য ভৈল আসি
এড়ি যত ধর্ম্ম-কর্ম্ম।
কেন মতে ইটো        পালিবেক রাজ্য
প্রজার নেজানে মর্ম্ম॥ ১১২
তিলর কুশর        ব্রাহ্মণ ইহার
রাজাত কমন ফলে।
খাই বিধ্বংশ্য়        একোকে নেজানে
বানরর নাড়ীকল॥
স্বভাবে কৃপণ        নেদয় নেখায়
দ্বিজগণ ধন সঞ্চা।
ভোজনীতে সবে         রাজ্য ভাঙ্গিবেক
আছোক পালি প্রপঞ্চা॥ ১১৩
রাজ্য চর্চ্চা যত        পড়ি থাকিবেক
শ্রাদ্ধর হুইবে দেবান।
ইহার নিমিত্তে        দিবাক নপাইব
আন ব্রাহ্মণক দান॥
অল্পত সন্তোষ        নহিবেক ইটো
ভস্ম করিবেক শাপে।
হেনয় আক্রোষি        ঋষির রাজ্যত
বঞ্চিবে কাহার বাপে॥ ১১৪
হরি হরি হরি        চন্দ্র মহারাজ
করিলা কোন বিপত্তি।
আমার কপালে        যিহৌক সিহৌক
তোমার কি ভৈল গতি॥
তোমাকেসে লাগি        দহে কলেবর
কিমতে বর্ত্তিবা তুমি।
এহি বুলি সেনা        হেট মাঠ করি
কান্দি যাই হুমাহুমি॥ ১১৫
নুশুনিয় বোল        নাহি মাত বোল
কাংশ পরিগৈল জীন।
ছটফট মাত্র        করৈ যত পাত্র
সবারো মুখ মলিন॥
মহাশোকে দুঃখে        চলে সেনাগণ
আগক নচলে ভরি।
এহিমতে ঋষি        সহিতে নৃপতি
পাইলন্ত সিটো নগরি॥ ১১৬
রাজা আসিবার        শুনি নরনারী
অযোধ্যার ভৈল বাজ॥
সেনার বিষাদ        দেখি বোলে সবে
কিবা ভৈল অসৎ কাজ॥
আগ বাঢ়ি সবে        শোধা শোধা করি
আকুল সমস্ত প্রাণী।
শোকতে কথাক        কহিবে নপারি
শোকে গদ গদ বাণী॥ ১১৭
কি কহিবো আর        সমূলি বুড়িল
কাহাক থাকিবো চাই।
বিশ্বামিত্র ঋষি        সবে রাজ লৈলা
রাজাক দেশ ডকাই॥
পুত্র ভার্য্যা লৈয়া        গুচিব নৃপতি
রাজ্যর নিকল হুই।
হেন শুনি সবে        নগরী লোকর
গাবত লাগিল জুই॥ ১১৮
মহা শোক শেলে        হৃদয় ভেদিল
দিনত ভৈল আন্ধার।
হাট বাট চানি        নিরন্তর প্রাণী
করে সবে হাহাকার॥
ক্রন্দনর আতি        উর্ম্মি উঠলিল
আযোধ্যা নগর যুরি।
হৃদয়ত মুঠি        হানে কতো উঠি
মাটিতে ফুরে বাগরি॥ ১১৯
প্রজার ক্রন্দন        শুনি হরিশ্চন্দ্র
নেদন্ত কাতো সিদ্ধান্ত।
চিত্ত দৃঢ় ধরি        অধোমুখ করি
দুবার আসি পাইলন্ত॥
অন্তেষ পুরত        ভৈলন্ত প্রবেশ
একেশ্বরে নর দেব।
শৈবা পটেশ্বরী        স্বামীকে দেকিয়া
শপটে করিলা সেব॥ ১২০
নৃপতি বোলন্ত        শুনা মহাদই
যেন হুবা আছে কাজ।
বিশ্বামিত্র ঋষি        মোত খুজিলন্ত
দান দিলো সামরাজ॥
তুমি আমি পুত্র        রোহিতাশ্ব রাজ
লৈলা যত ধন ধান।
দেশত থাকিবে        আমাক নেদন্ত
যাইবে লাগে অন্যস্থান॥ ১২১
কোপে যম সম        বিশ্বামিত্র ঋষি
দ্বারত আচন্ত রই।
হৈব আথন্তর        ওলোবা সত্বর
কুমরক কোলে লই॥
যেবে মোত চিত্ত        এড়া সবেরিত
বস্ত্রলোবা একখানি।
ঋষির হাতত        ভালে ভালে আজি
এড়াই যাওঁ তিনি প্রাণী॥ ১২২
নমো হরি পদ        পঙ্কজ যুগল
দণ্ডবতে শিরে পরি।
কৃষ্ণর কিঙ্করে        ভণিলা শঙ্করে
বিচিত্র পদ দুলরী॥
শুনা সর্ব্বজন        আমার বচন
চিত্ত সাবধান করি।
পাপ হোক ক্ষয়        পুণ্যর উদয়
ডাকি বোলা হরি হরি॥ ১২৩
পদ
ধর্ম্ম পক্ষীগণে বোলে শুনিয়ো জৈমুনি।
নৃপতির হেন বাক্য শৈয্যা আছে শুনি॥
রাজাক বোলন্ত প্রভু করিলাহা ভাল।
ইটো রাজ্য সুখ লৈয়া জীবা কত কাল॥ ১২৪
অথির সংসার আজি কালি যাইবো মরি।
কার ধন জন পরিবার বসুন্ধরী॥
বিশেষ পাত্রক দিলা আনন্দ আমার।
দেবতা পিতৃর সবে শুজিলাহা ধার॥ ১২৫
এহি বুলি পুত্রক মাতন্ত দেবী হাসি।
বাপ রোহিতাশ্ব মোর কোলে চাপ আসি॥
ইসে কষ্ট ভৈল তোক জীবাওঁ কেন করি।
পাঞ্চ বরিষত বাপ ভৈলি দেশান্তরি॥ ১২৬
এহি বুলি বাজভৈলা পুত্র কোলে করি।
দিব্য রত্নময় মন্দিরক পরিহরি॥
যত ধনবিত্তক করিলা পরিহার।
করে সর্ব্ব পরিত্যাগ রাজ অলঙ্কার॥ ১২৭
হেন দেখি অন্তেশ পুরর যত নারী।
শোক-শেলে দহে চিত ধরিতে নপারি॥
মহাদৈক বেঢ়ি সবে করে আর্ত্তরাব।
আমাক অনাথ করি কৈক যোবা মাব॥ ১২৮
পৃথিবীতে পরি কেহো পরৈ লোতালোতি।
কোনো হৃদয়ত দুই হাতে হানে মুঠি॥
কোন সতে আমাক ঋষিক দিলা দান।
তুমি অবিহনে কেনে ধরিবোহো প্রাণ॥ ১২৯
সাত পৃথিবীর রাজা তান পটেশ্বরী।
কোননো বিপাকে আই ভৈলা দেশান্তরি॥
বেহাইবাক নপাইলো ভাগিল ভরাহাট।
হরি হরি কিনো বিধি লেখিলা ললাট॥ ১৩০
সুখে সুতি থাকা মাব রত্নর শয্যাত।
কতো নারীগণে আসি যান্তে ভরি হাত॥
কতোহো চামরে ধরি ধোলে প্রতি নিত।
আজি কেনে নিদ্রাযাই কেবল ভূমিত॥ ১৩১
খোজ পাঞ্চ সাত যান্তে বিষাই যার পাব।
মহা দীর্ঘ পঠত চলিবা কেন মাব॥
কেনমতে একলে রাজার ধরা আল।
কোনে তুলিবেক মাব তোমার চবাল॥ ১৩২
এহি বুলি মহাশোকে কান্দে নারীগণ।
সবাকো বুলিলা শৈব্যা প্রবোধ বচন॥
ইসব জঞ্জাল আবে নপাতা আমাক।
কোনে বধিবাক পারে বিধি লিখিতাক॥ ১৩৩
ভূঞ্জিলোহো রাজ্য গোসাঁই দিলা যত কাল।
কাহার নকনো দোষ আমার কপাল॥
মোক যেবে দয়া আছে শুনা নারীগণ।
উলটিয়া যোবা সবে এড়িয়া ক্রন্দন॥ ১৩৪
উলটা উলটা বুলি প্রবোধিয়া যান্ত।
তথাপি কান্দিয়া যান্ত নিদিয়া সিদ্ধান্ত॥
এহিমতে সাত দুবারর ভৈল বাজ।
তেরকরি চাই দেখিলন্ত ঋষিরাজ॥ ১৩৫
কৈক যাস পাপী বুলি উঠিগৈলা রাগ।
দণ্ডধরি লবরিয়া ভেটিলন্ত আগ॥
কোবাইবে লাগিলা আতি দশন কামুরি।
ছবর চাপর কাকো দেন্ত ঝাপগুরি॥ ১৩৬
মরণক ভয়ে নারীগণ নিরন্তরে।
উলটিয়া লরদিয়া পশিলন্ত ঘরে॥
ভার্য্যায়ে সহিতে রাজা ঋষিক প্রণামি।
বোলন্ত থাকিবা হেরা চলিযাওঁ আমি॥ ১৩৭
এহি বুলি নৃপতি চিত্তক দৃঢ়করি।
চলি যান্ত হরিষে শৈব্যাক আগ করি॥
কিঞ্চিতেক নাহিকয় কপট বিষণ্ণ।
দুই হন্তকো দেখি আতি প্রসন্ন বদন॥ ১৩৮
কতো দূর যান্তে ঋষি ভেটিলন্ত আগ।
জানিলো নৃপতি তোক তই যেন লাগ॥
অমূল্য যতেক ধন তোর অলঙ্কার।
গাবত লৈযাস মোর অর্দ্ধেক ভাণ্ডার॥ ১৩৯
অনেক টঙ্কার বস্তু শরীরত যাই।
কিবা দিলি নুবুজিলো তোর অভিপ্রাই॥
নৃপতি বোলন্ত কষ্ট নকরিবা আত।
মনত নভৈল লরি আসিলো হঠাৎ॥ ১৪০
লয়োক বুলিয়ো রাজা দেন্ত আগবাঢ়ি।
তথাপিতো ক্রোধত আপুনি লন্ত কাঢ়ি॥
পরম আক্রোষি ঋষি অল্প ক্ষমা নাই।
বাকলি পিন্ধায় বস্ত্র লৈলা সোলোকাই॥ ১৪১
দেখি শৈব্যা আপুনি কাঢ়ন্ত অলঙ্কার।
দেখিয়া ক্রন্দন করে অবোধ কুমার॥
দেখি ঋষি খঙ্গে খেদি গৈলা আগবাঢ়ি।
ভূমিত পেলাই অলঙ্কার লৈলা কাঢ়ি॥ ১৪২
আই বাপ বুলি পারে কুমারে আতাস।
বিপরিত দেখি সর্ব্বজন মন ত্রাস॥
নমাতি আছন্ত চাই রাজা মহাদই।
আপোন ইচ্ছায়ে ঋষি গৈলা কাঢ়িবই॥ ১৪৩
পটেশ্বরী মাতন্ত পুত্রক কোলে ধরি।
উঠ উঠ পুতাই ক্রন্দন পরিহরি॥
দেশান্তরি ভৈলে কি করিবে অলঙ্কার।
তোহোরেসে দুঃখে দুঃখ ভৈলেক আমার॥ ১৪৪
এহি বুলি লরি গৈলা কুমারক লই।
হরিশ্চন্দ্র পাচত আগত মহাদই॥
ভার্য্যাসমে বহুদূর যান্ত মহারাই।
রহরহ বুলি ঋষি টঙ্কিলা দুনাই॥ ১৪৫
লবড়ম্বে আগভেটি আগে ভৈল ঠিব।
দেখি নৃপতির অন্তরীক্ষ ভৈল জীব॥
দক্ষিণা নেদিয়া মোক কৈক লাগি যাস।
যিবা কিছু দিলি গৈল দানত আপাস॥ ১৪৬
ঋষিক মাতন্ত রাজা করযোড় করি।
দিলো যত ধন অকণ্টকা বসুন্ধরী॥
কেবল শরীর মাত্র রহি আছে তিনি।
দক্ষিণার নিমিত্তে আমাক লোবা কিনি॥ ১৪৭
শুনি ঋষি বুলিলন্ত তেবে মোর ভাল।
পটেশ্বরী ধরিবেক ছবালর আল॥
তই বসি খাবি তোক নিনে মোক আন্তে।
কিবা দিবি দক্ষিণা নৃপতি বোল যান্তে॥ ১৪৮
আগেদেওঁ বুলি যিবা পাছে নেদে দান।
দুর্ঘোর রৌরব নরকত তার থান॥
পতি স্বত্বা ব্রহ্মস্বে করিবে সর্ব্বনাশ।
দিয়োক দক্ষিণা রাজা হুয়োক উদাস॥ ১৪৯
নৃপতির বোলন্ত ঋষি হুয়োক প্রসন্ন।
সম্প্রতি আমাত কিছু নাই আন বন॥
কতোদিবসক লাগি দিয়োক মেলানি।
যেন তেন প্রকারে দক্ষিণা দেওঁ আনি॥ ১৫০
বিশ্বামিত্রে বোলন্ত স্বরূপ কহ বাণী।
কত দিনে আমাক দক্ষিণা দিবি আনি॥
মোক ভাণ্ডি এড়াই যাইবে কোন বাপে।
একতিলে ভষ্ম করিবোহো চণ্ড শাপে॥ ১৫১
নৃপতি বোলন্ত ঋষি হুয়ো উপশান্তি।
বিস্তর নোবোলো মাসেকত দিবো খাণ্টি॥
তথাপি দিবাক নপারোহো দক্ষিণাক।
তেবে যেন যুবাই ঋষি করিবা আমাক॥ ১৫২
ঋষিয়ে বোলন্ত চলা শুভক্ষণ বেলা।
মোহোর দক্ষিণা রাজা নকরিবা হেলা॥
পুত্র ভার্য্যা সহিতে যাউক অপ্রমাদে।
চিরঞ্জীব হরিশ্চন্দ্র মোর আশীর্ব্বাদ॥ ১৫৩
তোর যত শত্রু নিরন্তর হৌক ক্ষয়।
পথতো নুহিবে সিংহ ব্যাঘ্র সর্প ভয়॥
যায়োক কুশলে একো নোহোক বিপাক।
যেন নপাসরস আমার দক্ষিণাক॥ ১৫৪
হেন শুনি হরিশ্চন্দ্র এহি হৌক বুলি।
প্রদক্ষিণে ঋষি পাবর লৈলা ধুলি॥
ধৈর্য্যক আলম্বি একো ভিতিক নচাই।
কৃষ্ণক সুমরি চলিযান্ত মহারাই॥ ১৫৫
নাহিকে সহায় লগে ভার্য্যা পুত্র মাত্র।
বাকলী বসন অলঙ্কার জল পাত্র॥
আজি খাইবে নাই ভৈলা ভিক্ষুকর বেশ।
এহিমতে মহা দুঃখ লভিল বিশেষ॥ ১৫৬
স্বামীর পাছত শৈব্যা শান্তি চলিযান্ত।
শিশুকাল হন্তে নতু গৃহর বজান্ত॥
নয়ন পুত্তলি যেন সুকোমল কাই।
প্রত্যক ভরিত ফুটি রুধির বজাই॥ ১৫৭
কতোদূর যান্তে ভৈলা পিয়াসে বিকল।
শরীর ঢাকিয়া বহি যায় ঘর্ম্মজল॥
তর তরি শুখাই আতি বদন মণ্ডল।
শিশির লাগিয়া যেন সঙ্কোচ কমল॥ ১৫৮
আগত নচলে আউর সুকোমল পাব।
পথ শ্রমে পীড়িলেক মুখে নাসে রাব॥
রাজাক বোলন্ত প্রভো কহিয়ো প্রমাণ।
আউর কত বেলি পাইবো রহিবার স্থান॥ ১৫৯
হেন শুনি হরিশ্চন্দ্র ভৈলা অধোমুখ।
হায় বিধি দুঃখর উপরি দিলা দুঃখ॥
পদুলির বাজ নতু হন্তে সোধে কথা।
নজানো হুইবেক আরু কমন অবস্থা॥ ১৬০
লোতক বহিছে অন্তর্গতে দহে চিত্ত।
পটেশ্বরী আকলিল স্বামীর ইঙ্গিত॥
চলিলো নৃপতি যাইবাক পারো আমি।
রঙ্গেসে পুচিলো চলিবাক পারো স্বামী। ১৬১
নৃপতি বোলন্ত ধীরে আইস প্রাণেশ্বরী।
নগৈল আসিবে খেদি ঋষি কোপ করি॥
যেনে তেনে নগরর বাজ হওঁ গই।
বঞ্চিবো রজনী আজি এক থানে রই॥ ১৬২
এহিবুলি হরিশ্চন্দ্র        ভার্য্যা পুত্র সমন্বিতে
অযোধ্যা পুরর ভৈল বাজ।
হেন দেখি নরনারী        ছবাল পর্য্যন্তে আসি
রজাক বেড়িলে সবে বাজ॥
হা প্রভু কৈক যাহা        অযোধ্যার নিজ নাহা
ভকত জনক তুমি এড়ি।
আবে প্রাণ দান দিয়া        আমাক লগত নিয়া
এহি বুলি পারে সবে গেড়ি॥ ১৬৩
তুমি জীব তুমি প্রাণ        তুমি বিনে নাহি আন
তুমিসে পরম ইষ্টদেব।
স্বপোনে সসেতে আমি        তোমাকেসে দোখো স্বামী
একচিত্ত মনে করো সেব॥
হেন রাজা আবে এরি        কোন মতে চিত্ত ধরি
প্রভুদেব কৈক লাগি যাহা।
তুমি এরি গলে আমি        মরিলোহো হেন জানি
নেত্র বলাই পাছে নেদেখাহা॥ ১৬৪
রহিয়োক মহারাই        খানিতেক থাকো চাই
জুরাওঁ আমার জীব প্রাণ।
দেখন্তে পরম সুখ        তোমার কমল মুখ
নেত্র ভরি সবে করো পাণ॥
কৈসানি দেখিবো আর        ইটো চন্দ্র বদনক
এহি মানে পরিচ্ছেদ ভৈলা।
হরি হরি দৈব বিধি        স্বপনর যেন নিধি
তিলকতে সবে নাশ গৈলা॥ ১৬৫
কৈকগৈলা ছত্রদণ্ড        কৈকগৈলা বাদ্যভণ্ড
কৈকগৈলা প্রচণ্ড প্রতাপ।
অপার সাগর যেন        সুখাই নিশবদ ভৈলা
হরি হরি হরিশ্চন্দ্র বাপ॥
পৃথিবীর রাজ যাক        বুলনীর বোলা যাক
আগে পাছে বেঢ়ি চলি যাই।
অতি শিশু বাল হন্তে        মহাশান্তি পটেশ্বরী
তান ভৈলা বালক সহাই॥ ১৬৬
পয়ান কালত আসি        অসংখ্য পদাতি ঝাকে
চতুর্ভিতি বেঢ়ি চলি যাই।
সুবর্ণর রথচয়        সুবর্ণ পাখরি হয়
চলে যত সীমা সংখ্যা নাই॥
অনেক সেবক সবে        আগত যোগান ধরে
প্রমত্ত হস্তীর কন্ধে উঠি।
সপ্ত পৃথিবীর পতি        চলি যান্ত ভূমি গতি
দেখি কেনে প্রাণ নযাই ফুটি॥ ১৬৭
দিব্য বস্ত্র অলঙ্কার        সুবর্ণ ভৃঙ্গার যার
লক্ষ লক্ষ লগে যাই চলি।
সিটো নৃপতির ভৈল        করঙ্গার কমণ্ডলু
পরিধান গছর বাকলী॥
অমূল্য রতন সার        অক্ষয় ভণ্ডার যার
দুঃখী ভিক্ষী খাই বলে যোগে।
সিটো মহা মানী হই        ভৈল ভিক্ষাহারী প্রাই
আজি খাইবে হেন নাহি লাগে॥ ১৬৮
চন্দ্র হেন জ্বলৈ মুখ        পদ্ম যেন নেত্র যুগ
উন্নত নাসিকা ভ্রুব ধনু।
দশন মুকুতা পান্তি        হাস্য চন্দ্রমার কান্তি
সর্ব্বগুণে সুকুমার তনু॥
আজি লাগি মাটি ধুলি        নজানিব রাজাবুলি
দেহা হইবে মলিন কুবেশ।
নিতে ভিক্ষা করি আনি        আবে জীবা তিনি প্রাণী
কেনে বিধি দেলে হেন ক্লেশ॥ ১৬৯
হা মাব মহাদই        চন্দ্রে সূর্য্যে নেদেখয়
তোর মুখ কমল রুচির।
সুবর্ণ প্রতিমা সম        জ্বলে দেহা নিরূপণ
গজ গতি গমন গম্ভীর॥
রত্নর অলকা পতি        যার অঙ্গুলীর কান্তি
মুখচন্দ্র বিজুলি প্রকাশ।
যাক চন্দ্র সূর্য্য দেব        নেদেখন্ত একোকালে
হেন মাব ভৈলন্ত উদাস॥ ১৭০
এখন শুখাইল মুখ        কিমতে সহিবো দুঃখ
দুর্ঘোর দুঃসহ পথশ্রম।
শরীর আসিল ঘামি        দেখি কেনে জীওঁ আমি
নভৈল আমার কেনে যম॥
মহা পতিব্রতা শান্তি        ভুমি পাবে চলি যান্ত
তাহাক দেখিয়া সর্ব্বলোকে।
সমস্তে মর্য্যদা গৈল        হেনসে বিপত্তি ভৈল
শরীর দগধ করি শোকে॥ ১৭১
হরি হরি রোহিতাশ্ব        পাঞ্চ বরিষতে বাপ
বঞ্চিলেক অযোধ্যার ভোগে।
কিবা পাপ আছ করি        হেন দুঃখী দেশান্তরী
ভৈলি তই কোন দৈবযোগে॥
দুগ্ধ পিয়া লাড়ু আনি        পথে দিব কোনে আনি
ক্ষুধার্ত নপাইবে অন্ন পান।
হরিশ্চন্দ্র শৈব্যা শান্তি        তোর দুঃখ দেখি আতি
জানিলোহো সঙ্কলীবে প্রাণ॥ ১৭২
রহ রহ মহারাই        তুমি বিনা প্রাণ যাই
হেন জানা সবে আমি মরা।
বচনে আশ্বাস বুলি        খণ্ডায়োক গুণ গালি
হৃদয়র শরক উদ্ধার॥
এহি বুলি বাট ভেণ্টি        পারৈ সবে লোটালুটি
নৃপতিক যাইবাক নেদই।
প্রজার সন্তাপ দেখি        চল চল করে আখি
রহিলন্ত রাজা মহাদই॥ ১৭৩
লোকর কারুণ্য বাণী        শুনি রাজা জানিলেক
অন্তর্গতে দহে শরীরক।
ধরিবে নোবারি চিত        ভৈলা রাজা বিমোহিত
দেখিলন্ত শোকর যমক॥
প্রবোধিলা পটেশ্বরী        নিজ ধর্ম্ম মনে ধরি
তবধ আচন্ত কতোক্ষণ।
শোকে গদ গদ মাত        সবাহাঙ্কে বুলিলন্ত
শুনা সবে নর-নারীগণ॥ ১৭৪
তুমি সবে হেন করা        আমার বচন ধরা
দারুণ সন্তাপ পরিহরা।
সুস্থ হুবা নর-নারী        যায়ো সবে ঘরাঘরি
ঋষিক নৃপতি বুলি ধরা॥
যেবে দায়া আছে মোক        ওলটা সমস্তে লোক
কেনেবা ধরন্ত ঋষি পাক।
নধরিবা গুণ দোষ        এরা সবে অসন্তোষ
মরা বুলি সন্তাপ আমাক॥ ১৭৫
মহাবেগে জল যেন        এক থান হুয়া ফেণ
খানিতেক থাকি মিল যাই।
বান্ধবর সমাগম        জানিবাহা সেহি সম
অসার সংসার সমুদাই॥
বিচারত সবে মিছা        তাক কোনে করে ইচ্ছা
যার কিছু জ্ঞান সম্পজিল।
হেন জানি এরা মর্ম্ম        পালিয়োক নিজধর্ম্ম
এহি বুলি রাজা প্রবোধিল॥ ১৭৬
নমো নমো হরি পদ        পঙ্কজ যুগল শিরে
দণ্ডবতে পড়ি শতবার।
হরির চরণ সেবি        কৃষ্ণর কিঙ্কর কবি
ছবি বন্ধে রচিলা পয়ার॥
শুনা সবে বোলো হিত        কৃষ্ণত অর্পিয়ো চিত
এরা আন কথা সবে মিছা।
আসনত বসি থাকি        হরি হরি বোলা ডাকি
যেবে আছে বৈকুণ্ঠক ইচ্ছা॥ ১৭৭
'পদ'
পক্ষিগণে বোলন্ত শুনিয়ো ঋষিকথা।
পাছে যেন ভৈলা হরিশ্চন্দ্রর অবস্থা॥
প্রজার সহিতে কথা কহিবার দেখি।
জানি গৈলা ঋষি পাছে খানিকো নাপেক্ষি॥ ১৭৮
গুঞ্জহেন ফুরৈ আরকত চক্ষু দুই।
কম্পি দুই ওষ্ঠ মুখে নিকলয় জুই॥
কঙ্কালত কপিঙ্গ বান্ধয় টানি টানি।
ডাক দি বোলন্ত তোর কথা আছো জানি॥ ১৭৯
করকর করি ঋষি চোবাবন্ত দান্ত।
দণ্ড তুলি যম যেন ক্রোধে খেদি যান্ত॥
নৃপতি বোলন্ত বর ভৈল অথন্তর।
শীঘ্রে ইথানর পরা হুয়োক অন্তর॥ ১৮০
এতেকতে বিশ্বামিত্র খেদি পলাই আসি।
কোবাইবে লাগিলা খঙ্গে দণ্ডক উল্লাসি॥
মোক দ্রোহ করি চলে পাতি আছ কুণ্ডা।
এহি বুলি কাহারো মুখত মারে কুন্দা॥ ১৮১
হুল স্থূল লগাইল প্রজার পশি রাজ।
উভরিয়া ফুরন্ত ক্রোধত ঋষিরাজ॥
চবর চাপড় মারি করৈ তাল ফাল।
পলাইবে লাগিল প্রজা যেন গরুপাল॥ ১৮২
পথ এরি পলাই কতো কেহো বলে টানে।
কতো লবড়ন্তে জুন্তি খাই পরে খালে॥
এহিমতে পলাই প্রজা ঋষিক বিভঙ্গে।
মাতিবে লাগিল ঋষি নৃপতিক খঙ্গে॥ ১৮৩
হাউরে পাপিষ্ঠ দুষ্ট নষ্ট কুলাঙ্গার।
আগে দান দিয়া মোক যত রাজ্যভার।
এবে কেনে তাক লাগি কর অনুশৌচ।
প্রজার সহিতে তোর কিসর আলচ॥ ১৮৪
জানিলো লৈবাক চাস মোর রাজ্য কাঢ়ি।
ধিক্ ধিক্ ধর্ম্ম হীন হরিশ্চন্দ্র হারী॥
বচন যতেক তোর যেন জল রেখা।
মোহোর আগত পাপী রাজা হেন দেখা॥ ১৮৫
মোত ঘাঞ্চ লগাই তোর জীবে হেন শাস।
পুনু রাজ্য লৈবে লাগি প্রজার চাপ পাশ॥
আজি কোবাই ভাঙ্গিবোহো তোর মুণ্ড খুলি।
এহি বুলি খেদি ঋষি যান্ত দণ্ড তুলি॥ ১৮৬
হেন দেখি নৃপতি কান্দন্ত তর তরি।
যাওঁ যাওঁ বুলি চলি যান্ত শীঘ্র করি॥
মহা দৈক হাতত ধরিয়া লৈয়া যান্ত।
আইস আইস বুলিয়া পাছক লাগি চান্ত॥ ১৮৭
মহা শান্তি চারু দেহা আতি সুনির্ম্মল।
ভাগরে পীড়িলা আতি বহে ঘর্ম্ম জল॥
আউল ভৈল কেশ মুখ হুই তর তরি।
যাইবে নোবারন্ত রাজা লৈযান্ত আজুরি॥ ১৮৮
দেখি মহা কোপে বিশ্বামিত্র দণ্ড তুলি।
কোবাবে লাগিলা মহাদইক মন্দ বুলি॥
হাউরে পাপিষ্ঠি কেনে নবঢ়াস পাব।
এভুরাজা সুখ বুলি ঘেলাবস গাব॥ ১৮৯
এহি বুলি দুনাই কোবাবন্ত দণ্ড ধরি।
ততাপিতো মহাশান্তি শৈব্যা পটেশ্বরী॥
ধর্ম্মক চাহন্তে একো নেদন্ত সিদ্ধান্ত।
ত্রাহি কৃষ্ণ কৃষ্ণ সুমরন্ত মাত্র যান্ত॥ ১৯০
কুমরে আটাস পারে মাবর কোলাত।
নৃপতিক লাগি উঠি মেলৈ দুই হাত॥
ঋষির মূর্ত্তিক দেখি কাম্পে তর তরি।
চক্ষু মুদি লুকাইল মাবর গলে ধরি॥ ১৯১
নৃপতিয়ো আন একো নোবোলন্ত বাক।
ঝান্তে আহা বুলি নেন্ত আজুরি শৈব্যাক॥
আইস প্রাণেশ্বরী বুলি লৈ যান্ত ঘসাই।
রোহিতাশ্ব কান্দে নৃপতির মুখ চাই॥ ১৯২
হেন দেখি প্রজা সবে করে হাহাঙ্কার।
হরি হরি মাব কিনো বিপত্তি তোমার॥
চন্দ্র সূর্য্যে দেখিবাক নপান্ত যাহাক।
কৈর বনবাসী আসি কোবাবৈ তোমাক॥ ১৯৩
মহাশান্তি আইর আবে হেন সে বিলাই।
কেন মতে নৃপতি আগত আছা চাই॥
এবেসে জানিলো হরিশ্চন্দ্র তুমি মরা।
এহি বুলি কান্দৈ প্রজা অন্তরর পরা॥ ১৯৪
সেহি বেলা পাঞ্চ বিশ্বদেব আসিলন্ত।
মহাদৈক দেখিয়া অশেষ কান্দিলন্ত॥
হরি হরি মহাশান্তি শরীর নসহে।
তোমার দুঃখত সকলোরে দেহা দহে॥ ১৯৫
হরিশ্চন্দ্র রাজার তুমি সে পটেশ্বরী।
কোন মতে পাপীষ্ঠে কোবাবে দণ্ড ধরি॥
আকাশতে থাকিয়া করন্ত হাহাকার।
হা-হরিশ্চন্দ্র কিনো অবস্থা তোমার॥ ১৯৬
এক চত্র রাজা তুমি সাতো পৃথিবীর।
কৃষ্ণর ভকত সন্ত সোহৃদ শরীর॥
যাহার যজ্ঞত নদী বহিলেক ঘৃতি।
সমস্ত দেবতা ভৈল পরম তৃপিতি॥ ১৯৭
হেন মহা বৈষ্ণব নৃপতি ধর্ম্মশালী।
ইহাক খেদাইল ঋষি দেশর নিকালি॥
দেব-দিজ পিতৃর খণ্ডাইলে সবে আশ।
দুর্ঘোর নরকে পাপী তোর হৈব বাস॥ ১৯৮
আজিসে আমার সবে আশা ভৈল ছেদ।
পাপী বিশ্বামিত্র ঋষি দিলে হৃদি খেদ॥
রাজার ডকায়া সবে লৈল রাজ্যভার।
তথাপিতো মনে ক্ষমা নাই দুরাচার॥ ১৯৯
অতি অপ্রমাদি পতিব্রতা বর-নারী।
কোননো স্বর্গক পাইবি আজি আঙ্কমারি॥
ঋষি হৈয়া ভৈল এতমান মন্দমতি।
ইটো অধর্ম্মর ফলে যাইবে অধোগতি॥ ২০০
এহি বুলি পাঞ্চো বিশ্বদেব পারে গালি।
ক্রোধিলন্ত বিশ্বামিত্র বজ্রর বটালি॥
শুন অরে সঞ্জকারী পাঞ্চো বিশ্বদেব।
তোমাক মধ্যস্থ করি আনিয়াছে কেব॥ ২০১
কিসক ভর্ৎসনা কর নুবুজি মহত্ব।
কোনে জানু পারে আসি পরর শ্রাদ্ধত॥
যেন বাটোবাল হুয়া শশার দেই শ্বাস।
কালে গ্রাসিলেক তোক আমাক জোঙ্কাস॥ ২০২
দেব বোলাই কব কথা কেবলে অহমহ।
খানিতেক রহ আর্জি ভাঙ্গো সবে গৃহ॥
খাইবে পাই রাজার মাত পক্ষপুর।
থাক আজি সবারো ভাবনা করো চুর॥ ২০৩
স্বরূপত ব্রহ্ম ঋষি মই হও যেবে।
নর হুয়া পৃথিবীক যোবা তোরা সবে॥
আমাক পারিলি গালি গ্রাসিলেক পাপে।
গর্ব্ভবাস নরক ভুঞ্জিয়ো মোর সাপে॥ ২০৪
হেন শুনি পাঞ্চো বিশ্বদেব আসিলন্ত।
আমিও করিব পারো শাপি তোর অন্ত॥
তথাপিতো নশপোহোঁ ক্ষমা ধর্ম্ম ধরি।
দিয়ো শাপ অন্ত ঋষি ক্রোধ পরিহরি॥ ২০৫
রাজার অন্তরে আমি পারিলোহো গালি।
ঋষি ভৈলে হৈবে লাগে ক্ষমা ধর্ম্মশালী॥
হেন শুনি বিশ্বামিত্র ভৈল উপশান্ত।
পাঞ্চ বিশ্ব দেবক সম্বোধি মাতিলন্ত॥ ২০৬
একোকালে ব্যর্থ নাহি আমার বচন।
তথাপিতো সীমা দেওঁ শুনা দেবগণ॥
পাণ্ডবর ভার্য্য হুইবে দ্রৌপদী প্রক্ষাত।
তাহান গর্ব্ভত অঙ্গে হুইবা সবে জাত॥ ২০৭
নহিবে বিবাহ বংশ নথাকিবে ভয়।
অল্পকালে মরি পাইবা দেবর নিলয়॥
দুনাই অমর হৈবা খণ্ডিবা দুর্গতি।
হেন শুনি পাঞ্চদেব গৈলা অম্রাবতী॥ ২০৮
পক্ষিগণ বদতি শুনিয়ো মহাশয়।
সেহিসে কারণে পাঞ্চ পাঞ্চালি তনয়॥
অল্পকালে মরি পাঞ্চ ভৈলা পূর্ব্ববত।
নভৈলা বিবাহ কারো ঋষির শাপত॥ ২০৯
জৈমুনি বোলন্ত পক্ষী কহিয়োক কথা।
পাছে যেন ভৈলা হরিশ্চন্দ্রর অবস্থা॥
বিশ্বামিত্র খেদিয়া গৈলন্ত কোন দেশ।
মহা কৌতুহলে শুনো কাহিনী নিশেষ॥ ২১০
পক্ষিগণে বোলে কথা শুনা আতঃপরে।
পাঞ্চ বিশ্বদেবক শাপন্ত ঋষিবরে॥
সেহি সময়ত রাজা ঋষিক এড়াই।
ভার্য্যায়ে সহিতে দূর গৈলন্ত পলাই॥ ২১১
উলটিয়া নিরীক্ষি চাহন্তে মহারথ।
ঋষিক নকরি দৃষ্টি যোজন পথত॥
লড়ি গৈলা বিশ্বামিত্র হেন অনুমানি।
বৃক্ষর ছায়াত বসিলন্ত তিনি প্রাণী॥ ২১২
পাঞ্চ বরিষর শিশু কোমল ছবাল।
ক্ষুধায়ে পীড়িল আতি ভৈল লাল কাল॥
দুইরো মুখ চাই কান্দে ক্ষুধা লাগে বুলি।
এতেকে শুনন্তে রাজা মরন্ত সমুলি॥ ২১৩
কিবা দিবো বুলিয়া কান্দন্ত মহারাই।
মহাদই দেখি ভৈলা বিহ্বল পরাই॥
ক্ষুধায়ে তৃষায়ে রাজা ভৈলন্ত হতাশ।
ভাগরে পীড়িলে ঘনে কাঢ়য় নিশ্বাস॥ ২১৪
ঝুমূরী
মহাখেদ পাইলা শান্তি।         প্রয়াসিত ভৈলা আতি॥
ওষ্ঠ কণ্ঠ সুখাই মুখ।         সহিবে নোবারে দুঃখ॥ ২১৫
পড়িলন্ত পৃথিবীত।         ভৈলা আতি বিমোহিত॥
নাহি একো শ্রুতিজ্ঞান।         উড়িগৈলা ধাতু প্রাণ॥ ২১৬
যেন পাত ভৈল আয়ু।         নাসাত নাসয় বায়ু॥
মৃতকর যেন থান।         দেখি রাজা বিদ্যামান॥ ২১৭
হাহামরে প্রাণেশ্বরী।         আথে বেথে গলে ধরি॥
শিরত সিঞ্চিল জল।         দহে দেহা শোকানল॥ ২১৮
জীয়ান্ত সাবটি ধরি।         উঠি উঠ প্রাণেশ্বরী॥
করা কেনে অযুগুত।         কান্দৈ রোহিতাশ্ব পুত্র॥ ২১৯
করোয়োক স্তন পান।         কেনে নেদা সমিধান॥
ফুটি যাই মোর প্রাণ।         আপোনহি সর্ব্বজান॥ ২২০
সর্ব্বকালে বুজা মোক।         নেমাতা স্নেহর পোক॥
কিনো ভৈলা নিদারুণ।         কতেক বর্ণাইবো গুণ॥ ২২১
রত্নর শয্যাত শোস।         তাতো নাহি পরিতোষ॥
আজি পৃথিবীত ঢলি।         পড়ি সুখে নিদ্রা গৈলি॥ ২২২
আসংখ্যাত নারী যাক        সর্ব্বক্ষণে সেবৈ তোক॥
চামরে ধরিয়া ঢুলে।         সুবর্ণর চতুর্দ্দোলে॥ ২২৩
অন্তেষ পুরত ফুরৈ।         নেত্র কান্দোবানে ঘুরৈ॥
সিটো প্রাণ পটেশ্বরী।         হণ্ঠী যাইবে কেন করি॥ ২২৪
এখনে ভাগিল রথ।         কেনে যাইবো দূর পথ॥
হাহা বিধি কিনো দুঃখ।         শৈব্যার মুখত মুখ॥ ২২৫
দিয়া কান্দৈ মহারাই।         নেত্র জল বহি যাই॥
ফোকারে নিশ্বাস আতি।         হা প্রিয়া বুলি মাতি॥ ২২৬
তোর শোকে দেহাদহে।         মোর ক হৃদয়ে সহে॥
এহি বুলি করা মন্যু।         হাতে মর্জ্জিলন্ত তনু॥ ২২৭
সিঞ্চিল শিরত জল।         দেহা ভৈলা অবিকল॥
কতো দেলি প্রাণ আইল।         শৈব্যা চক্ষু মেলি চাই॥ ২২৮
নৃপতি কান্দন্ত ধরি।         হেন দেখি পটেশ্বরী॥
রাজার ধরিয়া পাবে।         বুলিললন্ত বহুভাবে॥ ২২৯
সপ্ত পৃথিবীর পতি।         তোমার হেনসে গতি॥
প্রসন্ন করিয়ো মুখ।         কিছু নহে শোক দুখ॥ ২৩০
ক্ষণেকতে হোবে নষ্ট।         আকে লাগি কোনকষ্ট॥
জানা সবে শাস্ত্র ধর্ম্ম।         কেনে তুমি করা মর্ম্ম॥ ২৩১
সংসার সৃজিলা বিধি।         যেন স্বপনর নিধি॥
জাগিলে সমস্তে হরৈ।         কোনে মোর বুদ্ধি করৈ॥ ২৩২
ধৈর্যেসে আপদ তরি।         আন চিন্তা পরিহরি॥
করিয়োক উপদেশ।         যাইব আমি কোনদেশ॥ ২৩৩
ঋষির দেশর রাজে।         নাহি ঠাই একো রাজে॥
ইটো চিন্তা আসরিষ।         করিয়োক বিমরিষ॥ ২৩৪
হেন শুনি নৃপবরে।         গুণিলন্ত নিরন্তরে॥
সাতোদ্বীপা পৃথিবীত।         থানর নভৈল থিত॥ ২৩৫
নেরাইলো ঋষিরহাত।         চিত করে উতপাত॥
যাইবো আবে কোন পুরী।         পাইবে আসি ঘুরি ঘুরি॥ ২৩৬
এহি বুলি নরনাথ।         জানুত দিলন্ত মাথ॥
নুগুছে ঋষির ভয়।         দেখে রাজা তমোময়॥ ২৩৭
প্রবন্ধে গুণন্ত বসি।         মনত পরিল আসি॥
আছে পুরী বারাণসী।         স্বস্হভৈলা মহাযশী॥ ২৩৮
প্রণামিয়া কৃষ্ণপাবে।         ঝুমুরী শঙ্করে গাবে॥
শুনা এক চিতকরি।         সুখে যোবা আত্মাতরি॥
আন চিন্তা পরি হরি।         সবে বোলা হরি হরি॥ ২৩৯
’’’পদ’’’
শৈব্যাক সম্বোধি মাতিলন্ত মহারাজে।
আমার নেদেখো থান বারাণসী বাজে॥
পৃথিবীর বহির্ভূত সংসারতে সার।
তাতেসে নাহিকে মনুষ্যর অধিকার॥ ২৪০
সর্ব্বকালে যাত বিশ্বনাথ অধিকারী।
তৈকে লাগি যাওঁ উঠিয়োক বর নারী॥
মই লৈয়া যাওঁ আবে কুমরক কোলা।
তোমার বোলানে যাওঁ ধীরে ধীরে চলা॥ ২৪১
পুত্র কোলে করি লরিলন্ত মহাভাগে।
মহাদৈয়ো যান্ত নৃপতির আগে আগে॥
দণ্ডেকর পৃথত দিনেক যাই বহি।
বঞ্চন্ত রজনী মঠ মণ্ডপত রহি॥ ২৪২
কতো গৃহস্থর ঘরে লন্ত গৈয়া বাস।
কতো দিনা নৃপতির পরৈ উপবাস॥
একোকে নপাই কতো রহিবার বনে।
শরীর বিবর্ণ ভৈল রৌদ্র বরষুণে॥ ২৪৩
নাহি অন্ন বস্ত্র সবে বাকলি বসন।
ভিক্ষায়ে ভোজন ভৈলা ভূমিত শয়ন॥
ধূলায়ে ধূসর তনু চিনন নযাই।
হেন মহাকষ্টে দুখে যান্ত মহারাই॥ ২৪৪
কতোদিনে পাইলা গৈয়া পুরী বারাণসী।
আগভেণ্টি বিশ্বামিত্র ঋষি আছে বসি॥
দেখি নৃপতির শিহরিল সর্ব্ব গাব।
প্রদক্ষিণে ঋষির নমিলা দুই পাব॥ ২৪৫
ভার্য্যায়ে সহিতে প্রণামিলা মহাবলী।
ঋষিক বোলন্ত রাজা করি কৃতাঞ্জলি॥
পাদ্যঅর্ঘ্য দিবো হেন নাহি একোধন।
সেবাতে ভৃত্যক প্রতি হয়োক প্রসন্ন॥ ২৪৬
ভার্য্যাক পুত্রক লোবা নুহি মোর প্রাণ।
বুলিয়োক শীঘ্রে যদি কার্য্য থাকে থান॥
ঋষিয়ে বোলন্ত আন নাহি প্রয়োজন।
যেন লাগে দিয়ো মোক দক্ষিণার ধন॥ ২৪৭
আপোনার মুখে খান্তা করি দিলি আশ।
আজিয়েরে নৃপতি সম্পূর্ণ ভৈল মাস॥
দিনা চারি ভৈলে আসি আছো বাট চাই।
চাহন্তে চাহন্তে তোক আক্ষিয়ো দুখাই॥ ২৪৮
যেন বুলি আছা আবে সুমরা তাহাক।
শীঘ্র করি দিয়োক যজ্ঞর দক্ষিণাক॥
আজি আউর ভাণ্ডিবে নোবারা মহারাজ।
দক্ষিণা কারণে আইলো এরি রাজ কাজ॥ ২৪৯
রাজা বোলে যদি আজি পূর্ণ ভৈল মাস।
আউর কিছু বুলিবে মোহোর নাহি শাস॥
কিন্তু আছে এভো দেখা দুই ওর সীমা।
ইয়ো বেলি খানি মোক করিয়োক ক্ষমা॥ ২৫০
এহি হোক বুলি ঋষি মাতিলা রাজাক।
পাকদিয়া আসো আজ্ঞালৈয়া আপোনাক॥
ইবেলিয়ো আসিলে পাতস কাপ জাপ।
সর্ব্বনাশ করো তেবে দিয়া ব্রহ্মশাপ॥ ২৫১
হেন বুলি বিশ্বামিত্রে পশিল নগর।
নৃপতিক পায় আসি মহাচিন্তা জ্বর॥
যেন ঘোর নির্ঘাত পড়িল আসি মাথে।
অধোমুখে বসিয়া গুণন্ত নরনাথে॥ ২৫২
কোন কর্ম্ম করো আবে যাইবো কৈক লাগি।
কৈত মিত্র আছে কৈত ধন পাইবো মাগি॥
আপনার মুখে মই বুলি আছো বাক।
কেনমতে দিবো আজি সিটো দক্ষিণাক॥ ২৫৩
কত কদর্থনা আউর সহিবো ঋষির।
এক মনে বোলো এরো আপন শরীর॥
তথাপিতো ব্রহ্মস্ব থাকিবে মোত রহি॥
যত বংশ হুইবে তাকো মারিবেক দহি॥ ২৫৪
ব্রহ্মস্ব রহিলে মোর নুহিবে নিস্তার।
কত জন্ম পলু হৈয়া থাকিবো বিষ্ঠার॥
এহি বুলি মনে মনে গুণন্ত নৃপতি।
এবে কোন উপায়ে নযাইবো অধোগতি॥ ২৫৫
আপোনাক বিকি ব্রাহ্মণর সুজো ধার।
আত পরে বুদ্ধি আন নাহিকে আমার॥
মোর ভাগ্য যে হৌক পুরুষ এরাউক।
এতেক বোলন্ত আসি প্রবেশিল শোক॥ ২৫৬
মাত বোল হরিল দেখন্ত অন্ধকার।
হেন দেখি চিত্ত আউর নসহে শৈব্যার॥
লোতকে পুরলী আসি গদ গদ মাত।
ধীরে ধীরে সুন্দরী স্বামীকে মাতে মাত॥ ২৫৭
কার্য্য সময়ত কেনে ভৈলা হত বুদ্ধি।
আপদ ব্যাধির হোবৈ ধৈর্য্যেসে ঔষধি॥
মোর বাক্য ধরা প্রভো চিন্তা পরিহরা।
অঙ্গীকৃত সত্যক সত্বরে রক্ষা করা॥ ২৫৮
যিটো পুরুষর নষ্ট ভৈল অঙ্গীকার।
লোকর বর্জ্জন হোবে জীবন ধিক্কার॥
নাহি নাহি আন ধর্ম্ম জানা সত্য বিনা।
জানি আন নিচিন্তিবা দিয়োক দক্ষিণা॥ ২৫৯
অগ্নি হোত্র করে যিটো পঢ়ে চারি বেদ।
যত মহা দান আদি করি অবিচ্ছেদ॥
সকলো নিস্ফল যার লরিল বচন।
হেন জানি সত্য প্রভো করিয়ো রক্ষণ॥ ২৬০
কীর্ত্তি নামে এক রাজা আছিল পূর্ব্বত।
শত অশ্বমেধ আচরিল বিধিবত॥
আরু এক রাজসূই মনে করি ইচ্ছা।
স্বর্গ হন্তে পরিল বারেক বুলি মিছা॥ ২৬১
সত্য নেই ঊর্দ্ধক অপত্যে অধোগতি।
হেন জানি সত্যক রাখিবে করা মতি॥
ইন্দ্রতো অধিক সুখ গৈল কত কাল।
আউর কালে অনুশোচ করা মহীপাল॥ ২৬২
তোমারেসে দুখ দেখি অন্তর্গত দহে।
কিকরে জীবন আউর হৃদয় নসহে॥
শুনা বচনেক বোলো চরণত ধরি।
বুলিবাক চাহন্তে লোতক পড় ঝরি॥ ২৬৩
অশেষ ক্রন্দন আসে মনত অসুখে।
মাতিবে নোবারি আছিলন্ত অধোমুখে॥
লোতকে ভেদিলে গদ গদ করে মাত।
আঞ্চলে মলছি মুখ দুনাই বোলে বাক॥ ২৬৪
উপজিল পুত্র রাজা এতেক বোলন্তে।
পৃথিবীত মকমকি পড়িল কান্দন্তে॥
আরু একো বুলিবাক নপারি সুন্দরী।
করন্ত বিলাপ নৃপতির পাবে ধরি॥ ২৬৫
হেন দেখি নৃপতির মনত অসুখ।
মহাদৈক তুলি বস্ত্রে মুছিলন্ত মুখ॥
কিসক কান্দহ বান্ধৈ বুলিয়ো সত্বর।
পুনর যে নাম লৈলি আগত কুমার॥ ২৬৬
কিবা গুণি পৃথিবীত পার লোটা লুটি।
শীঘ্রে প্রাণেশ্বরী কহ প্রাণ যাই ফুটি॥
শুনি কতো বেলি ভৈল শৈব্যার চেতন।
অল্প করি নৃপতিক বুলিলা বচন॥ ২৬৭
উপজিল পুত্র রাজা তযু যথোচিত।
মহন্ত জনর হোবে হেনসে উচিত॥
পুত্র প্রয়োজনে বিভা করয় ভার্য্যাক।
আবে পুত্র উপজিলে এরিয়ো আমাক॥ ২৬৮
আন একো উপায় নেদেখো আত বিনা।
আমাক বিক্রয় করি দিয়োক দক্ষিণা॥
আপোনার সত্য রাখি করা থির হিয়া॥
মই বিক্রি যাওঁ প্রভু তুমি মাত্র জীয়া॥ ২৬৯
আমার নিমিত্তে তুমি এরিয়ো বিমন।
ইহেন ভার্য্যা পাইবা প্রভু যৈত মন॥
যজ্ঞ হোক সাম্ফলে দক্ষিণা দিয়া শুজি।
মোর বাক্য করা প্রভু পূর্ব্বাপর বুজি॥ ২৭০
শুনা সভাসদ মহাজনর ধর্ম্মক।
প্রাণান্তিক দুঃখ পাইলে নেরয় সত্যক॥
সার্ব্বভৌম্য রাজ পদ পুত্র ভার্য্যা যত।
চাণ্ডালত আপোনাক বিকিলা সত্যত॥ ২৭১
হেনজানি মহাজনে নেরিবা সত্যক।
সত্য শাস্ত্র তত্ত্বজানি ভজিয়ো হরিক॥
কৃষ্ণর ভকতি সত্য ধর্ম্ম অনুপান।
জানি উচ্চকরি ডাকি বোলা রাম রাম॥ ২৭২
ছবি
হেন জানি নৃপতির        হিয়া যেন যাই চির
শোকে আতি হৃদি যাই পুড়ি।
দেখিলন্ত তমোময়        শ্রুতি হীন মহাশয়
অন্তরীক্ষে ধাতু গৈল উড়ি॥
জানুত দিলন্ত মাথ        কতো বেলি নরনাথ
শোকত ভৈলন্ত অচেতন।
কতো হিয়া ভুকু মারি        পৃথিবীত মাথা তারি
আতি শোকে করন্ত ক্রন্দন॥ ২৭৩
হরি হরি প্রাণেশ্বরী        তোর মুখে কেন করি
আসিলেক বজ্র সম বাণী।
বুলিলা বিকিবে তোক        আতেসে অধিক শোক
হৃদয়ত শোক-শেল হানী॥
হেন ভৈলো অধোগামী        তোক কি বিকিব আমি
আপোনার জীবন কাতরে।
ম্লেচরো নাহিক ধর্ম্ম        করিবে হেন কি কর্ম্ম
কোননো অধম পাপী নরে॥ ২৭৪
হরি হরি প্রাণেশ্বরী        আপদত সেই তরি
মোহর কণ্ঠর হেমহার।
কোন সতে তোক এড়ি        থাকো মই প্রাণ ধরি
মুখ্যপ্রাণ তইসে আমার॥
সুন্দর সরল মুখ        দেখিলে পাহরো দুঃখ
জীয়ো সমুলঞ্চে দেখি যাক।
চাণ্ডালতো ভৈল ধিক        প্রাণ ফুটি নযাই ধিক
বিকিবোহ হেনয় ভার্য্যাক॥ ২৭৫
এহি বুলি মহাশয়        দেখিলন্ত তমোময়
পীড়িলেক শোকর ঝঞ্জালে।
হরিলা চেতন জ্ঞান        উড়িলা সমস্তে প্রাণ
পৃথিবীত পরিল নিঢালে॥
দেখি শৈব্যা মাথা তুলি        বুড়িল বুড়িল বুলি
আঙ্কোবালি ধরিলা স্বামীক।
শিরত সিঞ্চিন্ত পানী        বোলন্ত মধুর বাণী
প্রাণ এড়িবাক চাহ কিক॥ ২৭৬
চক্ষু মেলি চোবা মোক        খণ্ডোক দারুণ শোক
হিয়ার গুছুক ভকভকি।
তযু অত দুখ দেখি        কেনে আছো প্রাণ রাখি
কান্দন্ত সুন্দরী মকমকি॥
সুবর্ণর সিংহাসন        রত্নময় বিতোপন
তাতে তুলি কোমল বিছাই।
তাত থাকা নিদ্রা করি        এবে পৃথিবীত পড়ি
কেনেনিদ্রা গৈলা মহারাই॥ ২৭৭
পৃথিবীর রাজাগণে        খাটিলেক সর্ব্বক্ষণে
নম্রভাবে ভৃত্য হেন মান।
ভাণ্ডার সুবর্ণময়        দিলা মহারত্ন ছয়
কোটি কোটি ব্রাহ্মণক দান॥
রাজ ব্রহ্মভোজ রোল        লঙিঘল স্বর্গর কোল
সঙ্গে বহিলেক পঞ্চামৃত।
সিটো আজি নরেশ্বরে        দক্ষিণা দিবাক ডরে
মহারাজা পড়িল ভুমিত॥ ২৭৮
যিটো রাজা হরিশ্চন্দ্র        শ্রীমন্ত যেহেন ইন্দ্র
বুদ্ধি বলে বিষ্ণুর সমান।
সসাগরা বসুমতি        তৃণ যেন করি মত
ঋষিক উচর্গি দিলা দান॥
আনো যত হস্তী ঘোড়া        তার কোনে পাবে ওরা
ব্রাহ্মণক দিলা মহারাই।
সিটো ভৈল ভিক্ষু প্রায়        দক্ষিণা দিবার নাই
ঋষির ভয়ত ধাতু যাই॥ ২৭৯
হরি হরি বিধি তোর        কত অপরাধ ঘোর
চিন্তিলন্ত এন্তে মহামতি।
আঙ্ক কিবা শত্রু বুলি        এতেক দুর্গতি দিলি
করিলাহা হেনসে বিপত্তি॥
সুগন্ধ চন্দন যার        গাবে ঘসি মল কাঢ়ে
রত্ন অলঙ্কার বিরচিত।
সিটো কাল কৈক গৈল        হেনসে বিপত্তি ভৈল
এবে যেন নাটয় মাটিত॥ ২৮০
উঠা উঠা প্রাণনাথ        মোক চোবা তুলি মাথ
মোর গাবে অগনি জলয়।
দিয়া মোক সমিধান        যুড়াইবো সমস্তে প্রাণ
হেরা মই মাতো মহাদই॥
এবেসে জানিলো আমি        মরিলাহা প্রাণস্বামী
তোমাক পাইলেক মহাকালে।
এহি বুলি পটেশ্বরী        রাজাক গাবক এড়ি
পৃথিবীত পরিলা নিঢালে॥ ২৮১
রাজায় দেখন্ত আতি        বিমুর্চ্চিত ভৈল সতী
মুখরো হরিল মাত বোল।
রোহিতাশ্ব শিশু দেখি        ক্ষুধায়ে কান্দিলা আতি
মাবর চাপিলা আতি কেলি॥
আই দিয়া অন্নপান        ভোকে হেরা যাই প্রাণ
উঠা বুলি গলত বান্ধই।
হেরা চোবা সুখাই মুখ        নোবারো সহিব দুখ
এহি বুলি কুমারে কান্দই॥ ২৮২
মোক কোলে লোবা তুলি        হেরা চোবা পুত্র বুলি
হাতে ধরি ঝঙ্কারে রাজাক।
ভোকে গাব নুই থির        দিয়া ঘৃত লাড়ু ক্ষীর
কোলাত বসিয়া খাইবো তাক॥
কতেক ঘুমটি পারা        মোক কেনে ভোকে মার
বুলি কান্দে নৃপতি ক্রন্দন।
আছারয় হাত ভরি        মনত বিকল করি
গেরি পারি করন্ত ক্রন্দন॥ ২৮৩
সেহি বেলা বিশ্বামিত্র        উগুল থুগুল চিত
উঠন্তে বৈসন্তে চান্ত বেলি।
হৃদয়ত এহি ধ্যান        পাইবো আজি মই দান
রাজা দিবে সূর্য্যে অস্তভৈলে॥
থাকিব নোবারো বসি        উঠি লরিলন্ত ঋষি
যথাত আচন্ত রাজা পরি।
হাতে দণ্ড কান্ধে ছাতি        দেখিয়া কুমারে আতি
আই বাপ পুলি দিলে গেরি॥ ২৮৪
ঋষির মূর্ত্তিক দেখি        লুকায়া মুদিল আখি
নৃপতির বুকুত সান্ধিত।
বিশ্বামিত্র দেখে পাছে        মূর্চ্ছা গৈয়া পরি আছে
মহারাজা ভার্য্যার সহিত॥
বিমুর্চ্চিত দেখে আতি        দক্ষিণা হেরাইল বুলি
বসিলন্ত আধোমুখ করি।
সুখ নাহি উঠি যান্ত        নিহালি নিহালি চান্ত
জানো রাজা আছে ছল ধরি॥ ২৮৫
কান্ধে ঘট ধরি আনি        মাথাত ঢালন্ত পানী
উঠ উঠ হরিশ্চন্দ্র রাই।
দিয়া ধন দক্ষিণার        কান্ধর গুছায়ো ভার
ধরুবার কৈতো সুখ নাই॥
বোলন্ত অনেক বাণী        ঢালন্ত শিরত পানী
নৃপতিয়ে চক্ষু মেলি চাইল।
ঋষিক আগত দেখি        আরু মুদিলন্ত আক্ষি
দুনাই যেন যমপুরি পাইল॥ ২৮৬
দেখি ক্রোধে জ্বলি গৈল        রাজাক বুলিবে লৈল
তোর সর্বে বুদ্ধি করো চুরি।
দক্ষিণা দিবাক ডরে        পাইল তোক চিন্তা জ্বরে।
মিছাত আছস ভেম জুরি॥
উঠা উঠা ধর্ম্ম জানি        আপোনার সত্য বাণী
রাখি মোক শীঘ্রে দিয়া দান।
সত্য সূর্য্যে আছে রহি        সত্যেতেসে আছে মহী
সত্য সম ধর্ম্ম নাহি আন॥ ২৮৭
শুন অরে মহাপাপ        জানিলো পীড়িলে কাপ
বিস্তর নোবোলো আর বাক।
আজি সূর্য্য অস্ত গৈল        জানো রসাতলে গৈল
যেবে আনি নেদে দক্ষিণাক॥
এড়াইবে কাহার বাপ        বংশ দহি দিবো শাপ
করৈ ঋষি অতি চটি ফটি।
কিবা করা দেখো আত        খানিতেক চাহোঁ বাট
এটি বুলি গৈলন্ত উলটি॥ ২৮৮
'পদ'
জৈমুনির আগে পক্ষীগণ নিগদতি।
ঋষিক যাইবার দেখি উঠিলা নৃপতি॥
শৈব্যায়ো বসিলা কুমরক কোলে ধরি।
চিন্তন্ত বসিয়া রাজা ঋষিক সমরি॥ ২৮৯
আজি ঋষিশাপত সবংশে যাইবো তল।
কৈক যাইবো কি করিবো হৃদয় বিকল॥
গুণি একো করিবাক নোবারন্ত থির।
দেখি মহাদই দুনাই বোলে ধীর ধীর॥ ২৯০
এভো হেন করা প্রভু মোর বাক্য ধরা।
শাপ অগনিত পরি বিপাঙ্গে নমরা॥
মোক বিকিয়োক হিয়া করিয়োক থির।
দক্ষিণাক শুজি হাত এরায়ো ঋষির॥ ২৯১
হেন শুনি রাজা আতি ভৈলন্ত বিতত।
কান্দন্তে লোতক নাসে যেন কাষ্ঠবত॥
শৈব্যাক বোলন্ত বান্ধৈ করা মোর বাক।
পরম নির্দ্দয় হুয়া বিকিব তোমাক॥ ২৯২
মহাক্রুর পাপীজনো নাচরে ইহাক।
তাহাতে অধম হৈয়া বিকিবো তোমাক॥
কেনমতে কণ্ঠর বজাইবো হেন বাণী।
হেন বুলি তৈর উঠি গৈলা তিনি প্রাণী॥ ২৯৩
ভার্য্যায়ে সহিতে গৈলা নগরর মাজে।
বেঢ়ি বেঢ়ি তাসম্বাক সোধে সাম রাজে॥
কোন দেশী তোমারা উত্তম তিনি প্রাণী।
কুমরক দেখি দুগ্ধ লাড়ু দেই আনি॥ ২৯৪
নৃপতি বোলন্ত শুনা নগরীয়া লোক।
পরম ঘাতুক মই নুশুধিবা মোক॥
রাক্ষস পিশাঞ্চ যত সবাতো অধম।
পৃথিবীত মহাপাপী নাহি মোর সম॥ ২৯৫
ভার্য্যাক বিকিবে আসি আছো আগবাঢ়ি।
আহার নিমিত্তে প্রাণ যান্তে আছো ছারি॥
দাসী ভাবে লবা যেবে আছে প্রয়োজন।
ঝান্তে বোলা যেবে মোত আছয় চেতন॥ ২৯৬
এক বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ আসিল হেন শুনি।
জক মক দশন মাটিত লাগে ভূণি॥
চরাচর ফোট জকমক করে কেশ।
অতি বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ চলন্তে লাস বেশ॥ ২৯৭
গাব ভরি হাত সিটো আছারন্তে আসি।
নৃপতিক বোলন্ত বিকস কোন দাসী॥
মই লইবো কিনি দাসী যত লাগে ধন।
কত পাইলে দিবি কহ স্বরূপ বচন॥ ২৯৮
নগরর দ্রব্য আমি গ্রাহক করাওঁ।
নানাবিধ বস্তু যত ঘরে বসি পাওঁ॥
দুখ পাইবে লাগি কিছু নকরিয়ো শঙ্কা।
ঘরত পরিয়া আছে লক্ষকোটি টঙ্কা॥ ২৯৯
একেখানি ভার্য্যা মোর আতি সুকুমারী।
প্রাণ সম আমার প্রথম বিহা নারী॥
কর্ম্ম করিবাক নেদো দুখ পাইবে ডরে।
পানী আনি আপুনি রন্ধন করো ঘরে॥ ৩০০
তোর ভার্য্যা দেখো এই স্বভাবে সুথির।
কর্ম্মত কুশল হৈবে সুদৃঢ় শরীর॥
এইক দাসী পাইলে ভাল পাইবে ব্রাহ্মণী।
যেন লাগে লইবি ধন মই নিবো কিনি॥ ৩০১
ব্রাহ্মণর শুনি বজ্র সমান বচন।
মহাদুখে নৃপতির বিদারিলা মন॥
মাতিবাক নপারিয়া রাজা সেই টালে।
গোর কটা গাছ যেন পড়িল নিঢ়ালে॥ ৩০২
উঠ কিবা লইবি বুলি ব্রাহ্মণে মাতন্ত।
অচেতন ভৈল রাজা নেদন্ত সিদ্ধান্ত।
কণ্ঠর নোলাই মাত বিহ্বল পরাই।
তবধ নয়নে রাজা থাকিলন্ত চাই॥ ৩০৩
হেন দেখি দ্বিজর কুপিত ভৈল মন।
আপোন গাণ্ঠির শোলকাই আনি ধন॥
রাজা গাবর বাকলীত বান্ধি থৈলা।
উঠ অরে দাসী বুলি মাতিবাক লৈলা॥ ৩০৪
শৈব্যায়ে বোলন্ত রৈয়ো খানিতেক লাগি।
স্বামীক মাতিয়া যাওঁ ইজন্মক লাগি॥
প্রাণনাথ এবে দেখা দেখি আজি যাই।
পরিচ্ছেদ করি খানিতেক থাকো চাই॥ ৩০৫
হেন শুনি খঙ্গাইলে ব্রাহ্মণ অহঙ্কারী।
কোলার শিশুক ধরি লৈযান্ত আজুরি॥
কৈর স্বামী পাইলি বুলি কিল মারে ধনি।
বাম হাতে চুলে ধরি লৈযান্ত আজুরি॥ ৩০৬
মহাদই বোলে গুরু এরা এরা মোক।
চক্ষু গোট মেলি চাওঁ রোহিতাশ্ব পোক॥
মাবর পুত্রর দেখা দেখি আজি যাই।
চাওঁ মই নেত্র ভরি স্নেহের পুতাই॥ ৩০৭
ভৈলো কুলক্ষণী আজি ব্রাহ্মণর দাসী।
তই রাজকুমার নুছুবি মোক আসি॥
এহি বুলি আর্ত্তরাবে করন্ত ক্রন্দন।
মাবর বচন শুনি রাজার নন্দন॥ ৩০৮
মাব মাব বুলি খেদি গৈলা পুত্র খানি।
দেখি বৃদ্ধ ব্রাহ্মণে মারিলে লাঠি হানি॥
আইস বুলি তথাপি চাপিল আসি পাশ।
মাবক সাবটি ধরি পারন্ত আটাস॥ ৩০৯
হেন দেখি মহাদই করন্ত কাতর।
নমারা নমারা গুরু মরিবে কুমর॥
চরণত ধরো গুরু হুয়োক প্রসন্ন।
কুমরকো কিনিলৈয়ো দিয়ো কিছুধন॥ ৩১০
কর্ম্ম করিবাক নোবারিবো পুত্রবিনা।
সন্তাপত মরিবো মিছাতে মোক কিনা॥
হেন জানি মাব পুত্র একে লগে কিনা।
নোবারো রাখিবে প্রাণ রোহিতাশ্ব বিনা॥ ৩১১
হেন শুনি ব্রাহ্মণর পালটিল মন।
রাজাক বোলন্ত লোবা পুত্র বিকি ধন॥
যাই লগ লাগি পাশ নেরয় মাবর।
ধর্ম্ম ব্যবহারে ধন পাস দুই হন্তর॥ ৩১২
এহি বুলি দুইর ধন করি এক ঠাই।
বাকলি বস্ত্রত নিয়া বান্ধিল দঢ়াই॥
মাব পুত্র দুইক নেই এক ঠাইতে বান্ধি।
পাছত কোবান্তে দ্বিজে দুয়ো যান্ত কান্দি॥ ৩১৩
কাতি হৈয়া পড়িয়া আছন্ত রাজা চাই।
আগত বান্ধিয়া ভার্য্যা পুত্র লৈয়া যাই॥
করন্ত ক্রন্দন পৃথিবীতে পরে লুটি।
কিবাচাই আছো প্রাণ কেনে নযাই ফুটি॥ ৩১৪
হা পুত্র ভার্য্যা বুলি হিয়ে হানে মুঠি।
ঢাত ঢাত মাটিত পরন্ত উঠি উঠি।
হৃদয়র মাংস কাটি কোনে লৈয়া যাই।
করন্ত ক্রন্দন তাসম্বাক চাই চাই॥ ৩১৫
হরি হরি পুত্র সূর্য্যবংশে ভৈলা জাত।
সুকোমল শরীর সুন্দর ভরি হাত॥
তয়ো গৈলি বিক্রয় জীবন ধিক ধিক।
আউর কিবা দেখিয়াছো প্রাণ নযাই কিক॥ ৩১৬
হা প্রাণেশ্বরী হা হা রোহিতাশ্চ পুত্র।
তোমাসাক বান্ধিনেই কৈর সম দূত॥
হেনয় অবস্থা ভৈল মোর কর্ম্ম ফলে।
জীবো কিক লাগি আবে যাওঁ রসাতলে॥ ৩১৭
এহিমতে কান্দি কান্দি রাজা আছে চাই।
মহাদৈক পুত্রসমে দুইকো লৈয়া যাই॥
বৃক্ষ গৃহ তাসম্বার আঁর যেবে ভৈলা।
দুনাই পৃথিবীত পরি মুর্চ্ছাগত গৈলা॥ ৩১৮
সেহি সময়ত বিশ্বামিত্র পাইল আসি।
উঠ উঠ রাজা বুলি দিলন্ত উকাশি॥
কিবা ধন পায়া আছা দিয়োক সম্প্রতি।
শুনি চকমক করি উঠিলা নৃপতি॥ ৩১৯
ভার্জ্যা পুত্র বিকি ধন পায়া আছে যত।
তুপলি মেলিয়া দিলে ঋষিক হাতত॥
অল্পধন দেখি ঋষি সন্তোষ নভৈল।
শীঘ্র উঠি নৃপতিক বুলিবে লাগিল॥ ৩২০
শুন অরে পাপীষ্ঠ অধম কুলাঙ্গার।
এহিমানে অনুরূপ দক্ষিণা আমার॥
ঋষিহেন বুলি তই আমাক নগনি।
ক্ষুধাতুর জনে যাচ ভাতর পোতনি॥ ৩২১
এহি ধন পাই তোক করিবোহো ক্ষমা।
আজি মোর দেখ কেন তপর মহিমা॥
লৈয়ো তেবে দেখ তেবে মোর ব্রহ্মবল।
ঘোর চণ্ড শাপে সনে বংশ যাইবি তল॥ ৩২২
হেন শুনি হরিশ্চন্দ্র তরতরি মনে।
ভার্য্যা পুত্র বিকি ধন পাইলো এহিমানে॥
দিবে আরু কিছু মোর নাহিকে সম্পত্তি।
এতিক্ষণে ইটো ধন লৈয়ো মহামতি॥ ৩২৩
বিশ্বামিত্রে বোলে আরু নকরিবা হেলা।
এভো আছে দিবসর প্রহরেক বেলা॥
এয়োবেলি খানি থাকিবোহো বাট চাই।
আরু কিছু নবকিবি মোক মহারাই॥ ৩২৪
এহি বুলি কপিঙ্গত বান্ধি লৈলা ধন।
কোপ মনে বিশ্বামিত্র করিলা গমন॥
চিন্তা ভয়ে রাজার দগধ ভৈল মন।
শ্রুতি জ্ঞান নাই আর হরিল চেতন॥ ৩২৫
দুখর উপরে দুখ পাইলা মহারাই।
শরীরত মহাচিন্তা অগণি উধাই॥
নেদেখো উপায় আরু আবেসে মরণ।
বিশ্বামিত্র সাগরত নভৈল তরণ॥ ৩২৬
গুণি গাণ্ঠি আন একো নেদেখো প্রকার।
আপোনাক বিকি শুজোঁ আপোনার ধার॥
এহিমতে কতোক্ষণ দঢ়াই আপোনাক।
অধোমুখ হৈয়া রাজা দিলা দীর্ঘ ডাক॥ ৩২৭
আপোনাক বিকো হেরা যার আছে মন।
ভৃত্য করি কিনি লোবা আনিদিয়া ধন॥
যাবে নতু আসি হোবে সূর্য্য অস্তাগত।
সত্ত্বরে বোলাহা আসি মোহোর আগত। ৩২৮
এহি বুলিবারে বারে ডাকন্ত নৃপাল।
শুনি ভয়ঙ্কর এক আসিল ছাণ্ডাল॥
যেন অঙ্কারর বর্ণ জ্বলে কলেবর।
অন্ধ কূপ যেন জ্বলে নাসিকা বিবর॥ ৩২৯
ডাঙ্গর দুগোটা চক্ষু দেখি ভয়ঙ্কর।
বিকট দশন রাজা অগ্র অগ্রসর॥
ফাল্গুণর বায়ু যেন নাকর বতাস।
ওলমিছে পেট যেন বড় মৌর বাঁস॥ ৩৩০
মেঘর গর্জ্জন যেন মুখত শুনি মাত।
ভেঙ্গুরা থুলন্তর ভরি হাত॥
তাম্র বর্ণ গোফ দাড়ি লোহা অলঙ্কার।
হাতে জাঠি ধরি যেন রাক্ষস আকার॥ ৩৩১
অনেক চাণ্ডাল গণে বেঢ়ি আছে তাক।
মই কিনিবোহো বুলি মাতিলা রাজাক॥
কত ধন লাগে তোক কহ মুল দর।
কিবা অল্প লাগে কিবা লাগয় বিস্তর॥ ৩৩২
ঢলো পড়ো করে আতি মদ্য আছে লাগি।
অনুত্তর করি নৃপতিক মাতে রাগী॥
কীল কীল করি উন্মত হুয়া হানে
ভেল ভেল করিয়া মদ্যর গন্ধ আসে॥ ৩৩৩
হেন দেখি রাজা দিলা নাকত কাপোর।
তোরা কোন জাতি বুলি সোধে নৃপবর॥
কিবা নাম তোমার সত্বরে কহিয়োক।
চাণ্ডাল বদতি তই কিবা সোধ মোক॥ ৩৩৪
জাতিত চাণ্ডাল থাকো প্রবীর পুরত।
বঞ্চবধক নামে মই প্রক্ষাত লোকত॥
মৃত কর বস্ত্র মানে মোর অধিকার।
শুনি নৃপতির ভৈল হৃদয় বিদার॥ ৩৩৫
রাজায়ে বোলন্ত তই উলটিয়া যাস।
প্রাণাধিকে নহো মই চাণ্ডালর দাস॥
শাপ অগণিত মরো সেই মোর ভাল।
কোননো পাপিষ্ঠে হইবে চিতনি চাণ্ডাল॥ ৩৩৬
সেহি সময়ত বিশ্বামিত্র পাইলা আসি।
তবধ নয়নে ক্রোধ দণ্ডক উল্লাসি॥
রাজাক বোলন্ত অরে শুন মহীপাল।
দিবেক বিস্তর ধন গৃহস্থ চাণ্ডাল॥ ৩৩৭
পাইবো মই বহুধন চাণ্ডালে যদি কিনে।
অল্পসে দিবেক ধন কিনিলে সজ্জনে॥
হেন জানি চাণ্ডালত যাইয়ো বিক্রয়।
মোর যেবে শাপক তোহোর আছে ভয়॥ ৩৩৮
দুলড়ী
শুনি হরিশ্চন্দ্র        ঋষিক বোলন্ত
শরণ লৈলো তোমাত।
ভু্ঞ্জিলো পৃথিবী        আছিলো নৃপতি
সূর্য্যবংশ ভৈলোজাত॥
কোন সতে ভৃত্য        হুইবো চাণ্ডালর
ইটো সবে গরিহিত।
কুলীনর ঠাই        আমাক বিকাই
লৈয়ো দক্ষিণার বিত॥ ৩৩৯
শুনি বিশ্বামিত্র        ক্রোধে উঠলি
হাওরে পাপী দুর্জ্জন।
মোর মন পুরি        দক্ষিণা দিবাক
তোহোর নাহিকে মন॥
যেবে চাণ্ডালত        বিক্রয় নযাস
যেবে ধন নেদ তার।
এতিক্ষণে হেরা        শাপি ভস্মকরো
নাহিকে দোষ আমার॥ ৩৪০
শুনি হরিশ্চন্দ্র        বিহ্বল ভৈলন্ত
সমস্তে প্রাণ উড়িল।
ত্রাহি ত্রাহি বুলি        নিঢালে সমুলি
ঋষির পাবে পরিল॥
চরণত ধরি        করন্ত কাতর
হুয়োক ঋষি প্রসন্ন।
শোকে বিমহিত        ভৈলহো বিস্মিত
দিয়োক মোক শরণ॥ ৩৪১
চাণ্ডালত মোর        জাতি ভ্রষ্টহৌক
তোমারেসে ভৈলো দাস।
নকরা বিঘিনি        তুমি লোবা কিনি
দক্ষিণাতে লৈয়ো দাস॥
যেহি লাগে সেহি        বহন করিবো
ফুরাইবো কান্ধত করি।
কাম্পয় হৃদয়        দিয়োক নির্ভয়
থাপিয়োক মোত ভরি॥ ৩৪২
তথাপিতো ঋষি        নিষ্ঠুর বোলন্ত
ভরির এর নিলাজ।
টেটোন পালক        কি করিবো তোক
ধনতেসে মোর কাজ॥
তয়ো দাস ভৈলে        মোর অধিকার
কি করিবো তোক নিয়া।
নিয়োক চাণ্ডাল        আক বিকো আমি
দশ কোটী ধন লৈয়া॥ ৩৪৩
হেন শুনি ভৈল        চাণ্ডাল হরিষ
উলস মালস মন।
ঋষিক বুজায়া        ভারে ভারে আনি
দিলে দশ কোটী ধন॥
ঋষির ভরির        পরা নৃপতিক
আজুরি আনিলা ধরি।
পাপীষ্ঠ চাণ্ডাল        লগাইল ঘঞ্চাল
বান্ধি পাছ হাত করি॥ ৩৪৪
যেন খন্ত চোর        পাকল নৃপতিক
চাণ্ডালে করয় দণ্ডা।
যাস যাস বুলি        মারন্তে লৈযাই
উলটা যাঠির খণ্ডা॥
কতো দণ্ড ধরি        পিঠিতে কোবাবে
বিশ্রুতি ভৈলা নৃপতি।
একে ভার্য্যা পুত্র        বিয়োগ দগধ
আপোনারো হেন গতি॥ ৩৪৫
এহি মতে মারি        ধরি নৃপতিক
আপোনারো গৃহক নিল।
দণ্ডি করি পাছে        মরার ওপরে
কাম চাহিবাক দিল॥
মৃতকর বস্ত্র        দিবি আনি আরু
যি পাস চিতা সজালি।
মহা কষ্টে দুখে        নৃপতি থাকিলা
তাহার আদেশ পালি॥ ৩৪৬
আপোনার অন্ন        চাণ্ডালে নেদয়
ঘিণে মরিবেক বুলি।
আঠে চারি তার        দণ্ডিত ভূঞ্জন্তে
যুড়িয়া নব পাতলি॥
চাণ্ডালর ঘরে        বঞ্চন্তে রাজার
দণ্ডে এক যুগ যাই।
ভার্য্যাক পুত্রক        সুমরি সদাই
কান্দে হরিশ্চন্দ্র রাই॥ ৩৪৭
হরি হরি বান্ধৈ         এবে হুইবে ভৈলা
দুখতে মলিন মুখ।
সর্ব্বক্ষণে শোক        সুমরি নেরাব
পুত্রর দেখিয়া দুখ॥
বুলিবে নৃপতি        আসিবন্ত পারা
আমাক নিবে মেলাই।
ইটো আঠান্তর        একো নজানিলে
যি ভৈল মোর বিলাই॥ ৩৪৮
রাজ্য ত্যাগ ভৈল        সুহৃদে এড়িল
বিকিলো পুত্র ভার্য্যাকে।
আপুনি চাণ্ডাল        ভৈলো দাস আজি
মোহর কর্ম্ম বিপাকে॥
আবর কতেক        ভুঞ্জিবো ললাট
কোন গতি হোব মোর।
কষ্টর উপরি        কষ্ট দিয়ে আসি
দুখরো নেদেখো ওর॥ ৩৪৯
প্রভাত মধ্যাহ্ন        গধূলি বেলাত
এহিসে মুখর গীত।
চক্ষুর লোতকে        পাঞ্জরি ভিজই
নিদ্রা নাশে রজনীত॥
মৃতকর বস্ত্র        যিদিনা নপান্ত
চাণ্ডালে ধরিয়া মারে।
এহি মতে রাজা        চাণ্ডালর ঘরে
বঞ্চিলা দুখ নিকারে॥ ৩৫০
মহাদৈরো তৈতে        দণ্ডে যুগ যাই
বৃ্দ্ধ ব্রাহ্মণর ঘরে।
আঠে চারি পাঞ্চে        দিনেক ভুঞ্জন্তে
সিয়ো মরণক ডরে॥
ভুমিত শয়ন        মলিন বসন
ঢুলাবে জটিল কেশ।
মহাদই বুলি        চিনন নযাই
ভৈলন্ত মলিন বেশ॥ ৩৫১
খাইবাক নপাই        কুমর শুকাই
দুখীর যেন ছবাল।
আগক যাহান্তে        ব্রাহ্মণ কুমারে
তাতেসে নলাগে মিল॥
টের করি চান্তে        কুরূপ দেখাই
মলিন বস্ত্র নিসন্ধি।
দেখি পটেশ্বরী        ক্রন্দন করন্ত
পুত্রক গলত বান্ধি॥ ৩৫২
মই দুখিনীর        পেটত পুতাই
উপজিলি কিক লাগি।
তোর দুখ দেখি        কেনে প্রাণ ধরো
নগৈল হৃদয় ভাগি॥
হা প্রাণনাথ        তোমাকেসে লাগি
সর্ব্বক্ষণে ধুম পিওঁ।
আমাক পেলাইবে        আসিবাক পাবা
এহিসে আশাত জীওঁ॥ ৩৫৩
পুত্রে বোলে মাব        পিতৃ আসিবন্ত
ওলাই চাই থাকা বাট।
আপাদ আন্ধারে        পোহর নেদেখো
কতেক দুঃখ ললাত॥
হরি হরি প্রভু        ভালে কি আছন্ত
মোর দুখ আছা চাই।
নজানো বিধতা        তোমাক করিলে
আরু বা কোন বিলাই॥ ৩৫৪
মহা দুঃখ ডর        কিমতে সহিবো
আমাক পাইলেক অন্তে।
হা প্রভুদেব        জানো প্রাণ যাই
তোমাক নতু দেখন্তে॥
আউর ইটো জন্মে        দেখিতে নপাইবো
প্রভুর দুই চরণ।
ইসে মহা দুখ        মই অবিহনে
পুত্রর হুইবে মরণ॥ ৩৫৫
এহি মতে শান্তী        সদায়ে কান্দন্ত
লোতকর নাহি ছেদ।
অগ্নির সদৃশ        শরীর শোশয়
হিয়ার নুগুছে খেদ॥
হেনয় নিকরে        আছন্ত সুন্দরী
ব্রাহ্মণর হুয়া দাসী।
রাজ কুমরক        ফুল পারিবাক
বুলিলা এদিন ঋষি॥ ৩৫৬
ব্রাহ্মণ বচনে        রাজার কুমরে
হাতে কুকী গোট লৈয়া।
ফুলনি বাড়ীতে        সোমাই কুমরে
ফুল পারে দাঁরি নিয়া॥
সেহি ফুল গাছে        কাল সর্প আছে
উপরক তুলি ফেট।
কুমরক ক্রোধ        করি মহা সর্পে
মাথাত মারিল খোট॥ ৩৫৭
বিষর পরশে        থর থর কম্পি
কুমরর প্রাণ গৈল।
বুড়িল বুড়িল        বুলি পটেশ্বরী
পুত্রশোকে আউল ভৈল॥
দুহাতে ধরিয়া        মুঠি হানে হিয়া
হাহা পুত্র পুত্র বুলি।
মোক যাস এড়ি        শোকে পারে গেড়ি
মরিলো আবে সমুলি॥ ৩৫৮
মোহোর পুতাই        কোনে লৈয়া যাই
গর্ভত জালিয়া জুই।
হরি হরি বিধি        কতনো মারস
মোক শোক শেলে খাই॥
রোহিতাশ্ব বাপ        তোহোর সন্তাপ
কৈকনো গৈলে এড়াওঁ।
দয়ার কুমর        আমাক সুমর
লগে যমপুরে যাওঁ॥ ৩৫৯
কাক গলে বান্ধি        জুইয়ো হাবিয়াসে
কাহার চাহিবো মুখ।
মোক কোনে আসি        আই আই বুলি
পাহরাইবে সবে দুঃখ॥
এহি বুলি সতী        পরন্ত মাটিত
কান্দি আর্ত্তনাদ করি।
হেন দেখি আসি        ব্রাহ্মণে বোলয়
হাতত টোকোন ধরি॥ ৩৬০
হাওরে পাপিষ্ঠি        কিসক কান্দস
খুণ্ডাত ভাঙ্গিবো গাল।
ভাল ভৈল তোর        মরিল পুতের
গুছিল আল জঞ্জাল॥
আক কোনে আবে        খরিরে পুরিব
গঙ্গাত নিয়া পেলাও।
শুনি মহাদই        দান্তে খের লই
করিলন্ত কাউ বাউ॥ ৩৬১
দেখিয়া ভর্চ্ছিয়া        মাতিলা ব্রাহ্মণে
এড়াইলি এড়াইলি বুলি।
শুনি শৈব্যা পাছে        মৃতক পুত্রক
লৈযান্ত কোলাত তুলি॥
গঙ্গার তীরক        কান্দন্তে লড়িলা
জ্বলিল পুত্র সন্তাপ।
কুমরর গুণ        বিনাই কান্দন্ত
যাহান্তে করি বিলাপ॥ ৩৬২
নমো নমো হরি        গুছায়ো সংহরি
সংসারর দুঃখ ভার।
কৃষ্ণর কিঙ্করে        রছিলা শঙ্করে
দুলড়ী ছবি পয়ার॥
শুনা সর্ব্বলোকে        হিত চিন্তিয়োক
আসনত সুখে থাকি।
পাপক সংহরি        পুরুষ উদ্ধারি
হরি হরি বোলা ডাকি॥ ৩৬৩
পদ
পক্ষিগণ বোলে মুনি শুনি থাকা কথা।
কহো নৃপতির পাছে যিভৈল অবস্থা॥
এহি মতে মরা পুত্র শৈব্যা কোলে ধরি।
পথত কানদিয়া যান্ত আর্ত্তনাদ করি॥ ৩৬৪
কৈক গৈলি পুতাই তই দুঃখিনীক এরি।
কি মতে রহিবো মই ব্রাহ্মণর চেড়ী॥
কৈত আছা হরিশ্চন্দ্র মোর প্রাণপতি।
তুমি অবিহনে ভৈলো অনাথ সঙ্গতি॥ ৩৬৫
তব দয়াবন্ত কুমরক খাইলে সাপে।
শুনি কিবা জীবা তুমি পুত্রর সন্তাপে।
মোক প্রভু কিয় আসি নকরা আশ্বাস।
পুত্রর লগতে অগণিত করো যাস॥ ৩৬৬
এহি বুলি দীর্ঘ রাবে করন্ত ক্রন্দন।
সেহি বেলা হরিশ্চন্দ্র ত্রিশঙ্ক নন্দন॥
চাণ্ডালে পঠাইলে মৃতকক ফুরি চান্ত।
ক্রন্দনর রবেক দূরতে নিহালন্ত॥ ৩৬৭
মরিল মনুষ্য আনে পূড়িবাক প্রতি।
লবরন্ত লাগ আসি ধরিলা নৃপতি॥
কঙ্কালত লাঙ্গতি কান্ধত কোর পারি।
বিকৃত চাণ্ডাল বেশ চিনিবে নোবারি॥ ৩৬৮
ধূলায়ে জটিলা ভৈলা আউল সবে কেশ।
মহা কৃষ্ণ বর্ণ ভৈলা পিশাঞ্চর বেশ॥
ডাড়ি গোফ ভোবোকার দেখি আসেবান্তি।
স্বামী হেন বুলি তাঙ্ক নিচিনিলা শান্তি॥ ৩৬৯
চিনিবাক নোবারিলা রজায়ো ভার্য্যাক।
অপেশ্বরা গণো রূপে নাতিল যাহাক॥
রত্নর শলকাগণ আঙ্গলির পান্তি।
তপ্ত সুবর্ণর বর্ণ শরীরর কান্তি॥ ৩৭০
সিটো তনু শুখাই সবে ভৈল চারখার।
পরিল বিবর্ণ যেন বিকৃত আকার॥
শরীরর বস্ত্র আতি পরে টোপে মলি।
যেন ভিখারীর নারী ধীরে যান্ত চলি॥ ৩৭১
কতো বেলি পাইলা গৈয়া ভাগীরথি তীর।
দুঃখ শোক শান্তীর শরীর নোহে থির॥
কুমরর শরীরক কানি খানি পারি।
মৃতক পুত্রক শুবাবন্ত বর নারী॥ ৩৭২
তার মুখে মুখ দিয়া করন্ত বিলাপ।
সহিবে নোবারো বাপ তোহোর সন্তাপ॥
কিসক নমাত মোক আই আই বুলি।
তোর শোক অগণি মারন্তে আছে পুলি॥ ৩৭৩
এবেসে জানিলো তই পুত্র গৈলি মরি।
এহি বুলি মাটিত পড়িলা ধাত করি॥
অচেতন ভৈলা মাত বোল নাহি দেখি।
মৃতক শিশুক রাজা চাহন্ত নিরীক্ষি॥ ৩৭৪
গাত সবে আছৈ নৃপতির যত চিহ্ন।
মহা সুলক্ষণ একো অঙ্গ নুহি হীন॥
অনুমানে জানো এক রাজার ছবাল।
কিবা দোষে ইহার অল্পতে ভৈল কাল॥ ৩৭৫
আক দেখি হৃদয়ত কিয় লাগে তাপ।
এহি বয়সর মোর রোহিতাশ্ব বাপ॥
এনয় আয়ত দুই কমল লোচন।
এহি মুখ কর্ণ নাসা কপাল দর্শন॥ ৩৭৬
সমান শরীর একে অবস্থা আকৃতি।
নজানো ব্রাহ্মণে কিনি নিলে কোন ভিতি।
এবে হুইবে উমলান্তে ফুরৈ রঙ্গ করি।
যদি নতু যমে নেই পুতাইক পাসরি॥ ৩৭৭
হরি হরি শিশু ইটো কাহার নন্দন॥
হা পুত্র শোকে তোর কি করে জীবন।
এহি বুলি রাজা ভৈল সজল নয়ন॥ ৩৭৮
অধোমুখে থাকিলন্ত পুত্রক সুমরি।
দুনাই চেতন লাভ কান্দন্ত সুন্দরী॥
হা সুকুমার পুত্র সর্ব্ব সুলক্ষণ।
কোনবা কুযোগ আসি মিলিল মরণ॥ ৩৭৯
সর্ব্বাঙ্গে সুন্দর যেন সোণার পুতলি।
মোক এরি পুত্র আবে কোন পূরী গৈলি॥
জীয়ো মানে থলি পুতাই হৃদয়ত শাল।
আপুনি করিবো আজি আপোনার কাল॥ ৩৮০
হা প্রাণনাথ হরিশ্চন্দ্র গৈলা কোই।
তোমার স্নেহর হেরা মরে মহাদই॥
কিয়নো আশ্বাস আবে নকরাহা মোক।
পরিচ্ছেদ চাহা আসি রোহিতাশ্ব পোক॥ ৩৮১
প্রাণ পুত্র কৈকগৈলা ইজন্মক লাগি।
একেশ্বরী ভৈলো কুলক্ষণী মন্দভাগী॥
হা বিধি ভৈল আবে তোর মনে সুখ।
নৃপতিক দুঃখর উপরি দিলি দুখ॥ ৩৮২
রাজ্য উচ্ছেদ ভৈল এড়িল সুহৃদে।
ভার্য্যা পুত্র বিকা গৈল দক্ষিণার পদে॥
মহারাজ ঋষি হরিশ্চন্দ্র মহীপতি।
নকরিলা বিধতাই কোননো দুর্গতি॥ ৩৮৩
সিটো প্রাণনাথর নেদেখো আবে ভাল।
প্রাণে কি জীবয় নুশুনিলো একতাল॥
জানো প্রভু মোর শোকে দুঃখে গৈল মরি।
এহিবুলি মুচ্ছাগৈয়া পড়িল সুন্দরী॥ ৩৮৪
হেন শুনি নৃপতির বিস্ময় মনত।
কিবা সচেতত আছো কিবা স্বপোনত॥
কৈর নারী কান্দৈ ইটো মোর নাম লই।
এহেন্তেসে জানো মোর শৈব্যা মহাদই॥ ৩৮৫
জানো প্রাণ পুত্র রোহিতাশ্ব আছৈ মরি।
জানিলা নিশ্চয় রাজা কাতি চিত্ত করি॥
শোকে ধরিলেক ভৈল বাতুল স্বভাব।
পুত্র পুত্র বুলিয়া ত্যজিলা দীর্ঘরাব॥ ৩৮৬
দশোদিশ অন্ধকার দেখি সেহিকালে।
পুত্রর ভরিত রাজা পড়িলা নিঢালে॥
কতোক্ষণে শরীরত আসিল চেতন।
আকুলে ব্যাকুলে রাজা করন্ত ক্রন্দন॥ ৩৮৭
মহাশোকে হিয়ে ভুকু মারি নরনাথ।
হাপুত্র বুলি কতো আস্ফালন্ত মাথ॥
কতো উঠি উঠি রাজা পড়ন্ত আছারে।
কদলি বৃক্ষক যেন বাতাসে উৎপারে॥ ৩৮৮
পুত্র মুখে মুখ দিয়া করন্ত বিলাপ।
কিমতে এড়াইবো আবে তোহোর সন্তাপ॥
ইটো চক্ষু মুখ নাসা কপোল দেখন্তে।
হিয়া পুটি নযাই প্রভু আছোহো জীবন্তে॥ ৩৮৯
কোনে খেদি আসিবেক মাতা মাতা বুলি।
হৃদয় আন্দোলে কাক কোলে লৈবো তুলি॥
কার ধুলি মাটি মোর লাগিবে কোলাত।
ভোক লাগে বুলি কোনে লগাইবেক মাত॥ ৩৯০
মোহোর কোলাত কোনে যুড়িবেক বান্ধি।
কোননো মুখত চুম্বা দিবো গলে বান্ধি॥
প্রাণতো অধিক মোর স্নেহর পুতাই।
কৈক যাস মোক শোক সাগরে পেলাই॥ ৩৯১
মৎস্য যেন তোক মই বিকিলো পাপীষ্ঠে।
সেহি কষ্টে মোক জানো এড়ি গৈলা নিষ্ঠে॥
হা বিধি এতেক করিয়া ক্ষমা নাই।
সর্প হৈয়া খাইলে মোর পুত্রক দুনাই॥ ৩৯২
যতেক সর্ব্বস্ব রাজ্য ভার মোর গৈলা।
একেশ্বর ভৈলো পুত্র ভার্য্যায়ো রৈলা॥
আপুনি চাণ্ডাল ভৈলো গৈল জাতি কুল।
সবেও নভৈল পুত্র সন্তাপর তুল॥ ৩৯৩
কোন দৈবে খাইলে কুমরক সর্প হুই।
মোক খাহা আমি এড়াওঁ পুত্র শোকে জুই॥
এহি বুলি নৃপতি কান্দন্ত হুক হুকি।
কৈক গৈলা রোহিতাশ্ব বুলি দেন্ত উকি॥ ৩৯৪
মৃতক পুত্রক হৃদয়ত ধড়ি তুলি।
নিঢালে পড়িলা দুনাই পুত্র পুত্র বুলি॥
সহিবে নোবারি রাজা শোকর ঝমক।
হরিল চেতন যেন দেখিল যমক॥ ৩৯৫
নাহি মাত বোল থাকিলন্ত মূর্চ্ছা গই।
হেন দেখি বিস্ময় ভৈলন্ত মহাদই॥
কৈর গোটে কান্দৈ কুমরক আঙ্কোবালী।
বিলাপ এড়িয়া শৈব্যা চাহান্ত নিহালি॥ ৩৯৬
হরিশ্চন্দ্র নৃপতির শুনো যেন মাত।
তেনয় আকার সুবলিত ভরি হাত॥
নিশ্চয় জানিলো মোর হোবে প্রাণনাথ।
তাহানেসে দেখো ইটো ছত্রাকৃত মাথ॥ ৩৯৭
সেহিসে উন্নত নাসা যেন তিল ফুল।
প্রভুর দশন দেখো কুন্দ কুড়ি খুল॥
পদ্মসম লোচন কুঞ্চিত নীল কেশ।
বহল হৃদয় সিংহ বন্ধ কটিদেশ॥ ৩৯৮
ললিত বলিত সেহি আঙ্গুলির পান্তি।
চন্দ্র বিম্ব সম নুহি সেহি নখ কান্তি॥
এহেন্তেসে নৃপতি জানিলো নিস্ত করি।
ভালেতো কান্দন্ত কুমরক গলে ধরি॥ ৩৯৯
এক মনে বোলো যদি রাজা স্বরূপত।
কিসক ফুরন্ত ইটো শ্মশান শালত॥
হাতে কোর খানি দেখো চাণ্ডালর নয়।
এহি বুলি শৈব্যা শান্তী ভৈলন্ত বিস্ময়॥ ৪০০
কিবা কুলক্ষণ আছে বুলি বিচারন্ত।
মস্তকর পরা তান চরণ পর্য্যন্ত॥
সকলো অঙ্গক শান্তী চাহান্তা নিরেক্ষী।
আছন্ত এগোটা রেখা ভরি তলে দেখি॥ ৪০১
মহা কৃষ্ণবর্ণ আতি নিন্দিত সাক্ষাত।
চাণ্ডাল হুইবেক হেন রেখা আছৈ তাত॥
তাক দেখি শান্তী অতি ভৈলা বিমোহিত।
তমোময় দেখিয়া পড়িলা পৃথিবীত॥ ৪০২
কতো বেলি সন্ধুকিয়া গদ গদ মাত।
অধোমুখ ভৈলন্ত গালত দিয়া হাত॥
সর সরি পরৈ লোহ করন্ত বিষাদ।
ধিক্ ধিক্ বিধি তোর হেনসে মর্য্যাদ॥ ৪০৩
দুতি ইন্দ্র যেন হরিশ্চন্দ্র মহীপাল।
ইহাঁক করিলে আনি অধম চাণ্ডাল॥
ধিকার আছোক তোর দারুণ হৃদয়।
যতেক বিহিত তোর সকলে বোলয়॥ ৪০৪
রাজ্যর খেদাই কৈলা চাণ্ডালর বেশ।
বিকাইল ভার্য্যা পুত্র দক্ষিণা উদ্দেশ্যে॥
এতেকে অবস্থা দিয়া নাতিল রাজাক।
চাণ্ডাল করিলে নিয়া কোননো বিপাক॥ ৪০৫
হরি হরি কিনো ইটো পরম অদ্ভুত।
পরম আশ্চর্য্য আবে মিলিল গবত॥
কৃষ্ণর কিঙ্করে পদ ভণিলা শঙ্করে।
ডাকি হরি হরি বোলা লোক নিরন্তরে॥ ৪০৬
ছবি
স্বামীর অবস্থা দেখি        পতিব্রতা মহাদৈর
শোকানল জ্বলৈ নিদারুণ।
নপান্ত চেতন জ্ঞান        দহয় সমস্ত প্রাণ
পুত্রর সন্তাপে দশগুণ॥
বুক যেন যাই ফুটি        ধরিবে নোবারি উঠি
নৃপতির গলত বান্ধিল।
বর্ণাই বর্ণাই গুণ        অনেক করুণ্য করি
দুঃখ চাই অনেক কান্দিল॥ ৪০৭
হরি হরি মহারাজ        প্রাণর বল্লভ মোর
সাতো পৃথিবীর অধিপতি।
কিছু নোহে বেদ ধর্ম্ম        হেন কিয় যুগ কর্ম্ম
তুমি ভৈলা চাণ্ডাল সঙ্গিত॥
দুঃখ মোর দহে দেহা        মাথা তুলি মোক চোবা
তযু মহাদই মরে কান্দি।
পাহরিলা মোর নেহা        এরিলাহা পূর্ব্ব স্নেহা
আশ্বাস নোবোলা গলে বান্ধি॥ ৪০৮
সর্ব্ব সৌভাগিনী নারী        পৃথিবীত আছো পরি
মোক শোক শেলে আছে শালি।
আজি প্রভু দেব কেনে        সুবর্ণর সিংহাসনে
নোতোলাহা মোক আঙ্কোবালী॥
হরি হরি প্রভু দেব        কিসক কেবল গাব
শুতিয়াছা কেবলে ভূমিত।
নেদেখোহো ছত্রদণ্ড        নুশুনোহো বাদ্য ভণ্ড
আগত নকরৈ নৃত্য গীত॥ ৪০৯
পয়ানব বেলা যার        সেনার নেদেখে পার
হয় হস্তী রথ যাই যুড়ি।
বাদ্য ভণ্ড কোলাহল        কর্ণত হানয় তাল
পাতাল পুরত লাগে হুড়ি॥
নদী সব উঠে পঙ্ক        স্বর্গত লাগয় ঢঙ্ক
শত্রুর যাইবাক পুরী নাই।
সিনো শ্রী কৈক গৈল        হেন সে বিপত্তি ভৈল
শ্মশানত ফুরে মহারাই॥ ৪১০
আগুয়ান বেলা যাক        মহা মহা রাজা ঝাক
সঘনে ধরয় সবে আল।
হাতে শেল শূলধরি        ফুরে সবে দম্ভ করি
রিপুর মধ্যত যেন কাল॥
কতো ছত্র ধরৈ মাথে        কাহারো ভৃঙ্গার হাতে
কোহো করে চামরে বতাস।
কোন বিধি বিপর্য্যয়        দহে দেহা অতিশয়
হেন রাজা চাণ্ডালর দাস॥ ৪১১
সিংহাসনে থাকা চড়ি        মহা পাত্রগণে বেঢ়ি
থাকে যেন ইন্দ্রক ত্রিদশে।
স্বর্গ মর্ত্ত্য রসাতলে        যাক সমে নাহি বলে
জগত ব্যাপিল যার যশে॥
বুদ্ধি বৃহস্পতি সম        আছিলাহা নরোত্তম
কোন দৈবে দিলেক আপদ।
মৃতকক চোবা আসি        শ্মশানত থাকা বসি
কাক গৃধ আবে সভাসদ॥ ৪১২
শবর মাংসক গিলি        পিশাচর কিলাকিলি
যক্ষ রক্ষগণে চমৎকার।
নাড়ী মুণ্ড ভণ্ড ছয়        শুনিতে কর্দ্দমময়
চিতা ধুমে দেখি অন্ধকার॥
শৃগালর ঘোর রাব        শুনি শিহরিল গাব
শবদে লাগয় কর্ণে-ত্রাস।
হরি হরি হরিশ্চন্দ্র        পৃথিবী লোকর ইন্দ্র
এবে ভৈল এই স্থানে বাস॥ ৪১৩
এহি বুলি পটেশ্বরী        স্বামীর গলত ধরি
করিলন্ত বিষাদ অশেষ।
উঠিয়োক মহারাজ        স্বরূপ কহিয়ো কাজ
কেনে ভৈলা চাণ্ডালর বেশ॥
তোমার অবস্থা যিবা        স্বরূপত দেখো কিবা
কিবা দেখিয়াছো স্বপনত।
ইয়ো যেবে হোয়ৈ সঞ্চা        তপ জপ সবে মিছা
আউর ধর্ম্ম নাহি সংসারত॥ ৪১৪
স্বপ্নতো তোমার মতি        পাপত নাহিকে রতি
পরম বৈষ্ণব রাজ ঋষি।
আত মই মরো মর্ম্মে        মহা যজ্ঞে দান ধর্ম্মে
সহায় নভৈল কোহো আসি॥
হেন শুনি নৃপবর        শোকে দহে কলেবর
কান্দিল শৈব্যার গলে ধরি।
গড়াগড়ি পৃথিবীত        কতো বেলি ধরিচিত
স্তম্ভ হৈয়া রাজা পটেশ্বরী॥ ৪১৫
যিমতে চাণ্ডাল ভৈয়া        ভার্য্যাত কহিবে লৈলা
নিশ্বাস তেজিয়া নৃপবর।
শৈব্যায়ো কহিলা তাপে        যেন মতে খাইল সাপে
যেন মতে মরিল কুমর॥
নৃপতি বোলয় প্রিয়া        নসহে আমার হিয়া
আপদর নেদেখোহো পার।
কেবলেসে আছে প্রাণ        নষ্টভৈল শ্রুতিজ্ঞান
দশোদিশ দেখো অন্ধকার॥ ৪১৬
দুখ ভূঞ্জি নপাওঁ ওর        মরণর পার মোর
উপায় নেদেখো মই আন।
কিন্তু মই পরাধীন        চাণ্ডালর ঘরে ঋণ
কেনমতে এড়ো আবে প্রাণ॥
চাণ্ডালত নুশুধিয়া        যেবে মই মরো গৈয়া
জলত বহ্নিত করি যাস।
নরকত কাল খপি        উপজিয়া পুনরপি
এহি চাণ্ডালর হৈবো দাস॥ ৪১৭
অনেক যাতনা পাইবো        রৌরব নরকে যাইবো
ছেদিবেক আসি পত্র বনে।
হাত ভরি বান্ধি নিয়া        মাথাত করত দিয়া
ছিড়িবে যম দূতগণে॥
যতেক নরক আছে        সবাহাঙ্কে ভূঞ্জি পাছে
চাণ্ডালরো হইবো অধিকার।
এবে কোন বুদ্ধি করো        কিবা জিওঁ কিবা মরো
চিন্তা সাগরর নপাওঁ পার॥ ৪১৮
শুনা বান্ধৈ মহাদই        পুত্রর সন্তাপে মই
জীবাক নাহিকে মোর মতি।
নরককো দিয়া পিঠি        মরিবোহো নিস্তে নিস্তি
পাছে যেন লাগে হোক গতি॥
চৌরাশী নরক ঘোর        পুত্রর সন্তাপে জুর
কেহো নুহি কহিলো সাক্ষাত।
যার গাবে ভৈল তাপ        সি কি আরু চাবে পাপ
যেনেতেনে করো আত্মাঘাত॥ ৪১৯
এখানে সাজিবো চিতা        পুত্রক তুলিয়া তথা
জালিবো অগনি যত্ন করি।
প্রাণকো এড়িবো তাত        বহ্নিত করিবো যাস
পুত্ররো লগতে যাইবো মরি॥
নবাধিবা বান্ধৈ মোক        এড়াওঁ ইটো মহাশোক
আপোনার করো আজি কাল।
এহি বুলি রাজা কান্দি        ভার্য্যাক গলত বান্ধি
অধোমুখ ভৈলা মহীপাল॥ ৪২০
নমো নমো জগন্নাথ        ভূমিত নমায়া মাথ
চরণত করো নমস্কার।
কৃষ্ণ পদ প্রসাদত        সিদ্ধি হোক অভিমত
পদ হৌক অশেষ প্রচার॥
কায়স্থ শঙ্কর কবি        পয়ারে রচিলা ছবি
ছবি পদ চল নিগদিত।
শুনিয়োক সর্ব্বলোক        বৈকুণ্ঠক চলিয়োক
হরি হরি বুলিয়া সম্প্রতি॥ ৪২১
পদ
পক্ষিগণে বোলে মুনি শুনা আত পরে।
কতো বেলি স্তব্ধ হৈয়া রাজা অনন্তরে॥
উঠিয়োকে প্রিয়া আবে শোক পরিহরি।
ব্রাহ্মণর গৃহক চলিয়ো প্রাণেশ্বরী॥ ৪২২
ধন দি কিনিলে দাসী ভৈল মহাদই।
কেনমতে ব্রহ্মস্বক শুজিবা বান্ধই॥
ঘোর ব্রহ্মস্বক সুমরন্তে লাগে ত্রাস।
আছোক আমাক, দহিবেক আগ পাছ॥ ৪২৩
যিবা জনে খাই বিষ তাক মাত্র মারে।
ব্রহ্মস্বে দগধ করে পু্ত্র পরিবারে॥
অন্যচারি ব্রাহ্মণর হরে তিল কুশ।
দুর্ব্বার ব্রহ্মস্বে দহে একৈশ পুরুষ॥ ৪২৪
চাণ্ডালর ঋণস্বক মোর নাহি ডর।
ইহাকে বঞ্চিলে নষ্ট হুইবো একেশ্বর॥
ব্রাহ্মণর ব্রহ্মস্বে সবংশে যাইবো তল।
হেন জানি বান্ধই সত্বর করি চল॥ ৪২৫
কদাচিতো ব্রাহ্মণক নুবুলিবা খর্ব্ব।
আউর রাজ ভার্য্যা হেন নকরিবা গর্ব্ব॥
আঠো অঙ্গ মারি দাসী ভাবে নিয়া কাল।
দেব হেন বুলি ধরা ব্রাহ্মণর আল॥ ৪২৬
উপদেশ বাণী প্রাণেশ্বরী তই শুন।
মোর মুখে কতেক বর্ণাইবোঁ তোর গুণ॥
তই হেন ভার্য্যা পাইলো কত জন্ম ভাগে।
তোহোর কথাক আবে কি কহিবে লাগে॥ ৪২৭
কর্ম্ম সময়ত তোক মন্ত্রী হেন লেখি।
রঙ্গর বেলাত যেন তই প্রাণসখী॥
স্নেহের প্রস্তাবে তই মাতৃ যেন ঠান।
শয়ন বেলাত তই দাসীর সমান॥ ৪২৮
কত তপসাই পাইলো তই হেন ভার্য্যাক।
অতি অল্পকালে বিধি দণ্ডিলে আমাক॥
করিবে নপাইলো অযোধ্যাত সুখ ভোগ।
আজি হন্তে তোর মোর মিলিল বিয়োগ॥ ৪২৯
কেলি কৌতূহলে আছিলিহি মোর পাশ।
ক্রীড়াত করিলো তোক যিবা পরি হাস॥
যেন ভৈল রঙ্গর সময় মন রোষ।
এহি তোত সাধো তাত নধরিবি দোষ॥ ৪৩০
আজি পরিচ্ছেদা তোর মোর দেখাদেখি।
ইজন্মক লাগি মোক মেলি চোবা আঁখি॥
থাকিয়োক বান্ধৈ মাতি যাওঁ যম পুর।
পুত্রর আমার আশা আজি হন্তে দূর॥ ৪৩১
শুনি মহাদইর ভৈল অন্তরীক্ষ প্রাণ।
কতো বেলি শরীরত নাছিলন্ত জ্ঞান॥
নসহে হৃদয় শোক পোরে ভক ভকি।
স্বামী আগে পড়িয়া কান্দয় মক মকি॥ ৪৩২
বজ্র সম বাণী কেনে বুলিলা নুগুণি।
তুমিও জানিলা মই হেন নিদারুণী॥
ধরিবে কি পারো প্রাণ পতি পুত্র শোকে।
এত কদর্থনা কেনে করিলাহা মোকে॥ ৪৩৩
দণ্ডেকো নেদেখি মোক নাছিল নিবাস॥
মরণ বেলাত কেনে এরিবাক চাস॥
হেনয় নিষ্ঠুর বাণী বোলা কোন সতে।
হৃদয় বিদীর্ণ শোক সহিবো কিমতে॥ ৪৩৪
স্ত্রী জাতি ভৈলে তার স্বামী জীব প্রাণ।
স্বামীসে দেবতা যত তপ জপ ধ্যান॥
হেন স্বামী মরিলে যি জনি নমরয়।
বজ্রতো অধিক দেখো তাইর হৃদয়॥ ৪৩৫
দণ্ডেকো নিজীবো প্রভো তুমি অবিহনে।
কুলক্ষণি বিধবার কি করে জীবনে॥
মই নেরো তথাপিতো প্রাণ যাই এরি।
কোন মতে রহিবোহো ব্রাহ্মণর ছেরি॥ ৪৩৬
সহগামী যাওঁ কর্ম্মে যেন যুবাই হোক।
ধরিবে নোবারো এই মহা দুঃখ শোক॥
হেন জানি প্রভো আরু নকরা নৈরাশ।
তোমার লগতে করো অগণিত জাস॥ ৪৩৭
রাজা বোলে বান্ধৈ তভো বোল এই বাণী।
অগণিত পড়িয়া মরিবো তিনি প্রাণী॥
উঠিলন্ত রাজা দিয়া এই সমিধান।
গঙ্গাতীরে নির্ম্মলা বহল চিতাখান॥ ৪৩৮
করন্ত সত্বর আতি মরিবাক লাই।
আনিল সুকান কাষ্ঠ সব মহারাই॥
কেতিক্ষণে প্রাণ যাইবে চিতে উত্রাবলে।
স্নানিলন্ত গৈয়া দুয়ো নামি গঙ্গাজলে॥ ৪৩৯
মৃতক পুত্রক গাব ধুবাইলন্ত আনি।
গঙ্গাত স্নানিয়া উঠিলন্ত দুই প্রাণী॥
পুত্রক চিতাত তুলি লগাইলন্ত জুই।
সূর্য্যক নমিলা পাছে কৃতাঞ্জলি হুই॥ ৪৪০
করোযোড়ে অগ্নিকো করিলা প্রদক্ষিণ।
বিষ্ণুক চিন্তিয়া দুয়ো ভৈলা ভয়হীন॥
প্রাণত নিস্নেহ হুয়া করি মন সাস।
হরি হরি বলিয়া বহ্নিত দিলা জাস॥ ৪৪১
উঠলিয়া গৈল বহ্নি গগণ শিখর।
নেদেখয় তিনিয়ো প্রাণীর কলেবর॥
দশোদিশে রোল উঠলিল হাহাকার।
হা মহারাজা পুরি ভৈল চারখার॥ ৪৪২
অশেষ প্রশংসা করে স্বর্গর দেবতা।
সাধু হরিশ্চন্দ্র সাধু শৈব্যা পতিব্রতা॥
বরষিল অসংখ্যাত কুসুম সুরভি।
অন্তরীক্ষ ঢালি বাবে দেবর দুন্দুভি॥ ৪৪৩
পূণ্যর প্রভাবে বহ্নি ভৈলা সুশীতল।
দহিলন্ত সবে শরীরর মাত্র মল॥
গুছিল কুবেশ তাসম্বার কলেবর।
প্রকাশয় নির্ম্মল যেহেন শশধর॥ ৪৪৪
সেহিবেলা ধর্ম্ম ইন্দ্র বিশ্বামিত্র ঋষি।
করিলন্ত নৃপতিক প্রশংসা হরিষি॥
ধন্য ধন্য হরিশ্চন্দ্র বড় যশ পাইলি।
আথে বেথে বহ্নিক নুমাইল পানী ঢালি॥ ৪৪৫
বাবে বিদ্যাধরে অপেস্বরা করে নৃত্য।
ইন্দ্রদেবে শরীরত সিঞ্চিলা অমৃত॥
দেখি আনন্দে পুত্রক আলিঙ্গিল॥ ৪৪৬
বুকুত সাবটি করিলন্ত শির ঘ্রাণ।
আঠ গুণ তেজ দশ গুণে ভৈলা প্রাণ॥
সাবটিলা আনন্দে পুত্রক শৈব্যা শান্তী।
মিলিল উৎসব সবে খণ্ডিলা দুর্গতি॥ ৪৪৭
আপুনি পিন্ধাইলা ইন্দ্রদেবে অলঙ্কার।
দেবাঙ্গ বসন মনুষ্যত অপ্রচার॥
দিব্য পুষ্প চন্দনে ভুষিত কলেবর।
ভৈলা হরিশ্চন্দ্র যেন দুতি পুরন্দর॥ ৪৪৮
অপেস্বরাগণে আসি শৈব্যাক বেঢ়িলা।
দিব্য বস্ত্র অলঙ্কারে শরীর মণ্ডিলা॥
পারিজাত সিঞ্চিলা উজ্জ্বল ভৈলা কান্তি।
করিলা দীপিতি অতি শৈব্যা মহাশান্তি॥ ৪৪৯
কুমরক পিন্ধাইলন্ত দিব্য অলঙ্কার।
খণ্ডিল আপদ বুলি দিলন্ত জোকার॥
গাবে বাবে বিদ্যাধরে নাচে অপেস্বরা।
সিদ্ধগণে প্রশংসন্ত আকাশর পরা॥ ৪৫০
গন্ধর্ব্বে করিলা আতি দুন্দুভি সম্বাদ।
নারদ প্রমুখে ঋষি দিলা আশীর্ব্বাদ॥
ধন্য হরিশ্চন্দ্র যশ করিলা প্রক্ষাত।
এহি বুলি শিরত সিঞ্চিলা পারিজাত॥ ৪৫১
ধর্ম্মে আসি বোলন্ত নৃপতি উঠ উঠ।
আমি ধর্ম্ম ইন্দ্র তযু কর্ম্মে ভৈল তুষ্ট॥
দিব্য বিমানত আসি চড়িয়ো সম্প্রতি।
স্বশরীরে স্বর্গক চলিয়ো মহামতি॥ ৪৫২
বাসব বদতি শুনা হরিশ্চন্দ্র রাই।
মোর বরে তোমার নির্ম্মল ভৈল কাই॥
আগ বাঢ়াইবাক আসিয়াছো দেববর্গ।
ভার্য্যা পুত্র সমন্বিতে চলিয়োক স্বর্গ॥ ৪৫৩
আউর পৃথিবীত থাকিবার নাহি যোগ্য।
দেবগণ সহিতে ভুঞ্জিয়ো দেব ভোগ্য॥
মনুষ্য দুর্ল্লভ দিব্য বিমানত চড়ি।
বিলম্ব নকরি শীঘ্রে স্বর্গে যাহা লরি॥ ৪৫৪
শুনি নৃপতির মনে আনন্দ মিলিল।
এড়াইলন্ত ক্লেশ যেন নিদ্রার জাগিল॥
ভার্য্যার সহিতে রঙ্গ ছালিলন্ত গাব।
ধর্ম্ম ইন্দ্র দুইহন্তরো নমিলন্ত পাব॥ ৪৫৫
কর যোর করিয়া বোলন্ত নৃপবর।
হৃদয়র কথা শুনা ধর্ম্ম পুরন্দর॥
ভার্য্যাক বিকিলো মই ব্রাহ্মণর ঘরে।
আপুনিয়ো দাস মই ভৈলো চাণ্ডালরে॥ ৪৫৬
যাবদেকে তাসম্বার নপাওঁ অনুমতি।
কেনমতে আমার হৈবেক সদগতি॥
ধর্ম্মে বুলিলন্ত রাজা জানা নিষ্টকরি।
মই সে আছিলো চাণ্ডালর রূপ ধরি॥ ৪৫৭
পূর্ব্ব জনমর ধর্ম্ম লিখিত কপাল।
তোমার হুইবেক লাগে অবশ্য চাণ্ডাল॥
মায়ায়ে ভুঞ্জাইলো সিটো কর্ম্ম ভৈল ক্ষয়।
নকরিবা রাজা কষ্ট এরিয়ো সংশয়॥ ৪৫৮
বাসবে বোলন্ত মই আছিলো ব্রাহ্মণ।
ভার্য্যা পুত্র তোমার কিনিয়া দিলো ধন॥
পরীক্ষিলো আপুনি যতেক তপধর্ম্ম।
এরিয়োক চিন্তা রাজা নকরিয়ো মর্ম্ম॥ ৪৫৯
শুনি নৃপতির ভৈলা হরিষ অশেষ।
মায়া জানি গুছিল মনর যত ক্লেশ॥
ইন্দ্রক বোলন্ত শুনিয়োক দেবরাজ।
আরু এক গোটা মোর আছে মুখ্য কাজ॥ ৪৬০
অযোধ্যার প্রজা মোর যেন পু্ত্র ভাই।
মই এরিলতে সবে মৃতক পরাই॥
তাসম্বাক চাহিবে মোহোর মন আছে।
প্রবোধিয়া প্রজাক স্বর্গক যাইবো পাছে॥ ৪৬১
মই সিটো লোকর সম্যকে জীব প্রাণ।
তাত পরে মোহোর বান্ধব নাহি আন॥
তাসম্বাক নেদেখি স্বর্গত হৈবে দুখ।
দিয়ো অনুমতি মই দেখো প্রজা মুখ॥ ৪৬২
বাসবে বোলন্ত এহি হোক নৃপবর।
বিমানত চড়ি যায়ো অযোধ্যা নগর॥
আপোন ইচ্ছায়ে করা প্রজাক আশ্বাস।
পাছে মহা রঙ্গে চলা দেবর নিবাস॥ ৪৬৩
হেন শুনি নৃপতির হরিষ মনত।
ভার্য্যা পুত্র সমে আরোহিলা বিমানত॥
নানাবিধ দেব বাদ্য বাজে আগে পাছে।
গন্ধর্ব্বে যোগায় গীত অপেস্বরা নাচে॥ ৪৬৪
বাবে বিদ্যাধরগণে আগত মৃদঙ্গ।
পুষ্প বরিষয় সিদ্ধগণে করে রঙ্গ॥
বামে শৈব্যা পটেশ্বরী কোলাত কুমর।
চলি গৈলা হরিশ্চন্দ্র দুতি পুরন্দর॥ ৪৬৫
চড়ি বিমানত আতি ছানিয়া আকাশ।
দ্বিতীয় আদিত্য যেন করয় প্রকাশ॥
দশোদিশ উঠিয়া দুন্দুভি বাদ্য বাজে।
উর্দ্ধ দৃষ্টি সচকিত চাবে সমরাজে॥ ৪৬৬
ক্ষণেক পাইলন্ত গৈয়া অযোধ্যা নগরী।
স্তম্ভিলা বিমান পাছে আকাশ আবরি॥
নানাবিধ দেব বাদ্য শবদ তুম্বুল।
দেখিয়া লোকর ভৈলা মনত আকুল॥ ৪৬৭
উর্দ্ধ দৃষ্টি সচকিতে চাবে সবে প্রজা।
দেখে বিমানত আছে হরিশ্চন্দ্র রাজা॥
কোলাত কুমর বামে শৈব্যা পটেশ্বরী।
শতগুণে জ্বলৈ কান্তি পূর্ব্বাধিক করি॥ ৪৬৮
রাজাক দেখিয়া ভৈলা হরিষ প্রজার।
শুভশুভ বুলি সবে দিলেক জোকার॥
লবড়া লবড়ি রঙ্গে করে হুলাহুলি।
নারীগণে জুমে জুমে পারয় উরুলি॥ ৪৬৯
আবেসে আমার সবে খণ্ডিল ললাট॥
এহি বুলি প্রজা সবে ছানি আসে বাট॥
রাজাক দেখিতে সবে ব্যাকুল স্বভাব।
দেখি নৃপতিয়ো নামি ভৈলা ভূমি পাব॥ ৪৭০
যেন পিতা পুত্রে কতো কালে এক ঠাই।
গুছিল বিয়োগ আনন্দর সীমা নাই॥
সিঞ্চে দুর্ব্বাক্ষত সবে রাজাক আবরি।
হরিষতে কান্দে কতো হাতে পাবে ধরি॥ ৪৭১
আজিসে আমার ভৈল মানস উদ্ধার।
আজি সুপ্রসন্ন ভৈল বিধাতা আমার॥
আজিসে জানিলো বজ্র গুছাইলন্ত বিধি।
দুনাই হাত মেলি পাইলো হারাইবার নিধি॥ ৪৭২
বার্ত্তাকো নপাইলো প্রভু গৈলা কোন ঠান।
তোমাক নেদেখি যেন ফুটিযাই প্রাণ॥
আজিসে জুরাইলো হিয়া বোলে প্রজাগণে।
তোমার কমল মুখ পিয়োহো নয়নে॥ ৪৭৩
হেন দেখি নৃপতির পালটিল মন।
কোন মতে এবে এরি যাইবো প্রজাগণ॥
মনে বিমরিষি হরিশ্চন্দ্র নৃপবর।
করযোড়ে বাসবক দিলন্ত উত্তর॥ ৪৭৪
দেবরাজ তোমাক করোহো নমস্কার।
হাত যোড়ে বোলো শুনা বচন আমার॥
অযোধ্যার লোকর আমিসে সবে প্রাণ।
মোক বিনা স্বপনতো নিচিন্তয় আন॥ ৪৭৫
দেবতো পিতৃত করি আমাত ভকতি।
তাসম্বাক এড়িবাক নাহিকে শকতি॥
স্বর্গে যদি যাওঁ মই পাইবে উপতাপ।
ভকতক পরিত্যাগ হোবে মহাপাপ॥ ৪৭৬
গুরুবধ ব্রহ্মবধ যিবা জনে করে।
গরু মারে ব্রাহ্মণর সুবর্ণক হরে॥
গুরু পত্নী হরে আরু করে সুরাপান।
ভকতক ত্যাগে নোহে তত্তূল্য সমান॥ ৪৭৭
পরম ভক্তক যিটো এরে দুরাচার।
ইহ পরলোকে দুখ নুগুছে তাহার॥
হেন জানি কিঞ্চিতেকে নেরিবো প্রজাক।
যায়োক স্বর্গক ইন্দ্র এরিয়ো আমাক।
মোহোর নগত যেবে যাইবে প্রজাবর্গ।
দেবরাজ তেবেসে জানিবা যাইবো স্বর্গ॥
প্রজার লগত নরকত হৌক বাস।
প্রজাক এরিবে মোর নাহি অভিলাষ॥ ৪৭৯
বাসবে বোলন্ত শুনিয়োক মহারাজা।
ভিন্নে ভিন্নে পাপ পুণ্য করিয়াছে প্রজা॥
একেলগে কিমতে করিবা উপভোগ্য।
কেন মতে বোলা তুমি বচন অযোগ্য॥ ৪৮০
তুমি করিয়াছা মহাযজ্ঞ রাজসূয়।
চিরকালে স্বর্গত থাকিবা দেব হুই॥
আপোনার কর্ম্মকেসে ভুঞ্জিবাক পাই।
কোন মতে প্রজাসমে হুইবা একঠাই॥ ৪৮১
হরিশ্চন্দ্র বদতি শুনিয়ো দেবরাই।
যেনমত আমার আছয় অভিপ্রাই॥
যততে সিজিল কর্ম্ম প্রজারেসে বলে।
প্রজা যেবে নাহি কিবা করিবো একলে॥ ৪৮২
হেন প্রজাগণ এরি যাইবো স্বর্গ লোভে।
প্রজায় সহিতে মোক নরকত শোভে॥
যাহার নিমিত্তে মই বোলাওঁ মহারাজ।
হেন প্রজা এরি স্বর্গত নাহি কাজ॥ ৪৮৩
একবাক্য বোলো ইন্দ্র হোবা সাবধান।
মোর আশা সব প্রজা আছে যতমান॥
যেবে মহাযজ্ঞ মোর ভৈল স্বরূপত।
যিবা পূণ্যে চিরকাল থাকিবো স্বর্গত॥ ৪৮৪
প্রজার নিমিত্তে মই করিলো উৎসর্গ।
মোর পুণ্যে প্রজার সহিতে যাইবো স্বর্গ॥
ইন্দ্রক শুনায়া রাজা বুলি এহি বাণী।
তিল কুশ আনি উৎসর্গিয়া দিলা পানী॥ ৪৮৫
পুরাণ কাহিনী শুনা সভাসদ যত।
বৈষ্ণবর দেখা কেন কৃপার মহত্ত্ব॥
আপোনার পুণ্য দিয়া প্রজাক পালয়।
তপজপ যজ্ঞ দান যতেত আছয়॥ ৪৮৬
জগতর পুণ্যমানে জানা নিস্ত করি।
প্রাণী উপকারর অল্পকো নুহি সরি॥
হেন জানি প্রাণীক অভয় দিয়া দান।
বোলা হরি হরি পাইবা বৈকুণ্ঠত থান॥ ৪৮৭
দুলড়ী
এতেক বচন        শুনিয়া রাজার
আছিল যতেক পুণ্য।
উৎসর্গি দিবার        ফলে তেতিক্ষণে
ভৈলা সহস্রেক গুণ॥
ধর্ম্ম ইন্দ্রদেবে        ধন্য ধন্য বুলি
পুষ্প বরিষিয়া মাথে।
আকাশ চানিয়া        দুন্দুভি সম্বাদ
করন্ত দেবর নাথে॥ ৪৮৮
বাবে বিদ্যাধরে        গন্ধর্ব্বে গাবয়
অপেস্বরা গণে নাচে।
সিদ্ধ মুনি সবে        প্রশংসা করন্ত
আনো যত দেব আছে॥
সেহি বেলা ইন্দ্রে        দূত পঠাইলন্ত
গৈলা আম্রাবতী থান।
স্বর্গ হন্তে আসি        ভূমিতে নামিলা
অসংখ্য কোটি বিমান॥ ৪৮৯
স্বর্গক ছারিয়া        নামিলা ভূমিত
যেন সূর্য্য অসংখ্যাত।
অমৃত সমান        যত উপভোগ
বাঞ্চিলে মিলয় তাত॥
সুবর্ণ কিঙ্কিনী        বাজে রিনি জিনি
দিব্য রত্নে পারে জিকি।
জল স্থল যুরি        রহিলা বিমান
অযোধ্যা নগর ঢাকি॥ ৪৯০
বাসবে বোলন্ত        ধন্য হরিশ্চন্দ্র
সূর্য্যবংশী মহারাই।
যেহি মনবাঞ্চা        সেহি সিদ্ধি ভৈল
আরু আছা কিবা চাই॥
যাক মন আবে        তাক লোবা লাগে
বিমানে চরোক আসি।
সৃষ্টি থাকে মানে        রহিলে তোমার
ইটো মহা যশ রাশি॥ ৪৯১
এতেকে বচন        শুনি নৃপতির
হরিষ ভৈলা অশেষ।
সমস্ত প্রাণীক        আপুনি মাতিয়া
করিলা রাজা আদেশ॥
অযোধ্যা নগরে        যত লোক আছে
সবে বিমানত চরা।
স্বপুত্র বান্ধবে        স্বর্গক লাগিয়া
আমার লগতে লরা॥ ৪৯২
যত গজ বাজী        মহিষ মেথন
গর্দ্দভ ছাগল গরু।
কুকুর বিড়াল        হংস পার জন্তু
যত তৃণ বন তরু॥
পতঙ্গ পর্য্যন্তে        যত জীব জন্তু
মোর অযোধ্যাত আছে।
বিমানে চরিয়া        আগতে চলোক
মই চলি যাবো পাছে॥ ৪৯৩
রাজার বচন        শুনিয়া লোকর
আনন্দর নাহি পার।
স্বর্গক যাইবার        লাগি উসমিস
ভৈলক সবে প্রজার॥
লবড়া লবরি        বিঙ্গারাব করি
সবে ভৈলে এক ঠাই।
আথেবেথে দিব্য        বিমানক বাছি
লবৈ ভাল ভাল চাই॥ ৪৯৪
আপোন গৃহর        দুবারক লাগি
লৈযান্ত আপুনি ধরি।
আছে মানে সবে        সর্ব্বস্ব তোলয়
ছাগ গরু আদি করি॥
সবান্ধবে পাছে        বিমানত চড়ি
পিন্ধে দিব্য অলঙ্কার।
বেদাঙ্গ বসন        গাবত পিন্ধয়
গন্ধে পুষ্পে জাতিস্কার॥ ৪৯৫
দিব্য রত্নময়        আসনে উঠিয়া
বসয় ইচ্ছা সুখদে।
দিব্য মালা যত        পরিধান করে
যোগাবে পঞ্চ শবদে॥
যত দেব ভোগ        ভুঞ্জে সবান্ধবে
মিলিল কর্ম্মর ভোগ।
বিমানত চড়ি        আকাশর পথে
নৃপতির লবে লাগ॥ ৪৯৬
এহি মতে প্রজা        গণে বিয়াপিল
অন্য অন্য রঙ্গে হাসি।
যত জীব জন্তু        বিমানে চড়িয়া
পিপরা পর্য্যন্তে আসি॥
সবাকো নৃপতি        লগত লৈযান্ত
যত বৃক্ষ লতা বন।
ভূমিক এড়িয়া        সবে আলগিল
অযোধ্যা ভৈল উচ্ছন॥ ৪৯৭
সবারো মাজত        জ্বলন্ত নৃপতি
দিব্য বিমানত বসি।
তাহার মধ্যত        প্রকাশ ভৈলন্ত
যেন পূর্ণিমার শশী॥
মনুষ্যর চেষ্টা        গুছিল সবারো
দেবর যেন স্বভাব॥
জগতে আশ্চর্য্য        ভৈল নৃপতির
দেখিয়া পুণ্য স্বভাব॥ ৪৯৮
ইন্দ্রর আদেশে        চড়িয়া বিমানে
গগণ মণ্ডল ঢাকি।
অসংখ্যাত কোটি        কিঙ্কিনী বাজয়
দুন্দুভি শব্দ জাকি॥
আনো নানা বিধ        বাবে দেবে বাদ্য
করে মহানৃত্য গীত।
দেবতার শ্রীক        লভিয়া প্রজার
আনন্দে নধরে চিত॥ ৪৯৯
সবারো মাজত        উজ্জ্বল বিমান
কৈলাশ সম মন্দিরে।
দিব্য সিংহাসনে        বসিয়া নৃপতি
চলি যান্ত ধীরে ধীরে॥
ইন্দ্রর যতেক        পরিষদ আছৈ
মিলিল রাজাত আসি।
আনন্দিত চিত্তে        ভার্য্যার সহিতে
ক্রীড়া কৌতূহলে হাসি॥ ৫০০
নানা বীনা বেনু        মৃদঙ্গ বজাবে
গন্ধর্ব্বে গাবয় গীত।
মুখ্য মুখ্য অপে        স্বরা গণে কাছি
আগত করয় নৃত্য॥
কতো যোগাবয়        কর্পূর তাম্বুল
কতো যান্তে হাত ভরি।
কতো দুইপাশে        চামরে ঢুলয়
মাথো শ্বেতছত্র ধরি॥ ৫০১
অমৃত প্রভৃতি        যত দেব ভোগ
আগেতে যোগায় আনি।
সিদ্ধ মুনি গণে        উপাসি যাহান্তে
বোলন্ত প্রশংসা বাণী॥
হেন মহারাজা        নভৈল নুহিব
আউর পৃথিবীর মাজে।
ধন্য ধন্য মহা        রাজা হরিশ্চন্দ্র
প্রশংসে জ্ঞানী সমাজে॥ ৫০২
এহিমতে রাজ্য        আনন্দে উৎসব
পাইলন্ত স্বর্গর কোল।
নৃপতিক দেখি        স্বর্গবাসী লোক
করে জয় হরি বোল॥
সাধু সাধু হরি        শ্চন্দ্র নৃপবর
জগত ব্যাপিল যশে।
যাবে চন্দ্র সূর্য্য        থাকিল খিয়াতি
প্রশংসে বেঢ়ি ত্রিদশে॥ ৫০৩
হরিশ্চন্দ্র রাজা        মহা পুণ্য বলে
প্রজাক নিলে উদ্ধারি।
মগর আকার        করিয়া বিমান
থাপিলন্ত সারি সারি॥
যাক যেন যোগ্য        বসাইল স্বর্গত
রৈলা কতো দূর যুরি।
অদ্যাপি স্বর্গত        দেখিয়া প্রত্যক
নামে হরিশ্চন্দ্র পুরী॥ ৫০৪
সবারো মাজত        যেন মেরুগিরি
রাজার বিমান জলৈ।
ইন্দ্রতো অধিক        ভৈলন্ত শ্রীমন্ত
প্রতাপে সূর্য্যতো বলৈ॥
পুণ্যর প্রভাবে        যতেক ত্রিদশে
উপহাসে রাজাক আসি।
এহিমতে হরি        শ্চন্দ্র থাকি গৈল
সমস্ত স্বর্গ প্রকাশি॥ ৫০৫
রাজার পুণ্যর        সমৃদ্ধি দেখিয়া
শুক্রে বুলিলন্ত গুণি।
হেন ক্ষমাধর্থ        দানর মহত্ত্ব
নতু দেখি নতু শুনি॥
রাজার লগত        সমস্ত অযোধ্যা
আসি পাইলা স্বর্গস্থান।
ধর্ম্মর প্রভাবে        হরিশ্চন্দ্র পুরী
ভৈগৈল স্বর্গ সমান॥ ৫০৬
নমো হরি পদ        পঙ্কজ যুগল
যাগ যোগী করে ধ্যান।
শঙ্কর বদতি        ভৈল সমাপতি
হরিশ্চন্দ্র উপাখ্যান॥
কৃষ্ণর চরণ        সংসার তরুণ
প্রণামো সহস্র বার।
কৃষ্ণর কিঙ্করে        ভণিলা শঙ্করে
দুলরী ছবি পয়ার॥ ৫০৭
শুনা সর্ব্বজন        করি এক মন
মাধবত দিয়া মতি।
হরি বিনে আন        মায়া ময় জানি
করিয়ো হরি ভকতি॥
ইটো কলিযুগ        নাহি আন মতি
বিনে মাধবর নাম
হেলা পরিহরি        পুরুষ উদ্ধারি
ডাকি বোলা রাম রাম॥ ৫০৮
॥। সমাপ্ত॥।

</poem>


|} |}